যেসব কারণে রিক্ত হস্তে বিদায় নিচ্ছেন বরিস জনসন
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
অবশেষে পদত্যাগ করছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। দুদিন ধরে দলের ভেতরে নজিরবিহীন বিদ্রোহ আর পার্লামেন্টে ও প্রচারমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার পরও একগুঁয়েভাবে পদ আকড়ে থাকার পর শেষপর্যন্ত হাল ছাড়তে বাধ্য হলেন তিনি।
পদ ছাড়তে বাধ্য হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কয়েকটি সূত্রের বরাতে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বরিস জনসন এ মুহূর্তে তার পদত্যাগপত্র প্রস্তুত করছেন। কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব ও সরকারপ্রধানের পদ ছাড়লেও তিনি অক্টোবর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জনসনের আগ্রহের বিষয়ে স্পষ্টতঃ আপত্তি জানিয়েছে ব্রিটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টি। লেবার নেতা কেইর স্ট্যারমার বলেছেন, সরকারের এত বিপুল সংখ্যক মন্ত্রীর পদত্যাগ এবং কনজারভেটিভ পার্টিতে নজিরবিহীন বিদ্রোহের পর বরিস জনসনের পক্ষে আর নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব নয়।
একই অভিমত ব্যক্ত করে স্কটল্যান্ডের চিফ মিনিস্টার ও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নেত্রী নিকোলা স্টার্জন বলেছেন, বরিস জনসনকে কোনোভাবেই প্রধানমন্ত্রীর পদে মেনে নেওয়া যায় না।
বরিস জনসনের এমন প্রস্থানে ব্রিটেনের রাজনীতিতে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হতে চলেছে। এক সময়কার সাংবাদিক জনসন কনজারভেটিভ পার্টির রাজনীতিতে আসার পর থেকে নিজের কট্টরপন্থী অবস্থান এবং প্রথাবহির্ভূত বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজের মতো এক ধরনের পথ তৈরি করে নিয়েছিলেন। সঙ্গত কারণেই ব্রিটেনে অনেকে বরিস জনসনকে ব্রিটিশ রাজনীতির ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে অভিহিত করতেন।
লন্ডনের মেয়র পদে দায়িত্ব পালনের সময় থেকে জনসন নিজেকে কনজারভেটিভ পার্টির নেতাদের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জার হিসেবে উপস্থাপন করতে থাকেন। ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়ার পক্ষে অনুষ্ঠিত গণভোট তার সামনে এগোনোর পথ খুলে দেয়।
গণভোটে ইইউ ছাড়ার সিদ্ধান্ত আসায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। এরপর টেরেসা মের নেতৃত্বে গঠিত সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হন বরিস জনসন। তখন থেকে ব্রাসেলসের সঙ্গে লন্ডনের আলোচনা ও দর কষাকষিতে বারবার অচলাবস্থা এবং ব্রিটেনের একের পর এক আলোচকের পদত্যাগ বলে দিচ্ছিল, টেরেসা মেকে হটিয়ে বরিস জনসনের প্রধানমন্ত্রী হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার।
প্রধানমন্ত্রী হবার পর বিতর্ক যেন জনসনের পিছু ছাড়ছিল না। নিজের তুর্কি বংশোদ্ভূত পিতামহের মুসলিম পরিচয়কে রাজনৈতিক স্বার্থ অনুযায়ী একবার একভাবে ব্যবহার করা বরিস জনসন হিজাব পরিহিতা মুসলিম নারীদের নিনজা, ডাকবাক্স ইত্যাদি অভিহিত করে সমালোচনার মুখে পড়েন। কোনোরকম রাজনৈতিক পরিচয় ও অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও নিজের সে সময়কার বান্ধবীকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানাতে চেয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন কনজারভেটিভ পার্টির নেতাদের সঙ্গে।
কোভিড মহামারীর প্রাদুর্ভাব বরিস জনসনের রাজনৈতিক অপরিপক্কতা ও দ্বিচারিতাকে আরও বেশি স্পষ্ট করে তোলে। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য খাতের বেসরকারিকরণের উদ্যোগ, রেল ও পানি সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবায় বাজেট বরাদ্দে অনাগ্রহ- এমন নানা অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তের কারণে খুব দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা হারাতে থাকেন তিনি। যার চুড়ান্ত পরিণতি হিসেবে তাকে জনপ্রিয়তার হিসাবে রিক্ত অবস্থায় ক্ষমতা ছাড়তে হচ্ছে।
টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ সরকারের একের পর এক মন্ত্রী-এমপির পদত্যাগের পর অবশেষে পদ ছাড়তে বাধ্য হলেন জনসন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে পদত্যাগ করেন ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ। এরপর পদত্যাগ করেন অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এভাবে একে একে সরকারের ৩৫ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করলেও পদ আঁকড়ে বসেছিলেন বরিস জনসন। ঋষি সুনাকের স্থলে তিনি মিলিওনেয়ার এমপি নাদিম জাহাওয়িকে অর্থমন্ত্রী নিয়োগ করেন।
বুধবার সন্ধ্যায় নাদিম জাহাওয়িসহ ১৫ জন মন্ত্রী জনসনকে পদত্যাগের আহ্বান জানাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে যান। কিন্তু জনসন পদ ছাড়তে রাজি হননি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানানোয় তিনি কনজারভেটিভ পার্টির প্রভাবশালী নেতা মাইকেল গোভকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করেন।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ জনসন বুঝতে পারেন তার পক্ষে কোনোভাবেই সরকার চালানো সম্ভব নয়। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকে পদত্যাগপত্রের খসড়া প্রণয়নের জন্য ডেকে নেন।
তিন বছরেরও কম সময় আগে সাধারণ নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেও সাম্প্রতিক সময়ে বরিস জনসনের একের পর এক অসততা ও ব্যর্থতার খবর প্রকাশ হতে থাকে। কোভিড প্রাদুর্ভাবের কারণে লকডাউন চলাকালে নিয়ম ভেঙ্গে নিয়মিত পার্টি আয়োজনের খবর প্রকাশ পেলে তিনি জরিমানা গুনতে বাধ্য হন।
এরপর প্রকাশ পায় নিজের স্ত্রী ও সে সময়কার বান্ধবী ক্যারি সাইমন্ডসকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ দেওয়ার চেষ্টার খবর। চলতি সপ্তাহে সাবেক ডেপুটি চিফ হুইপ ক্রিস পিনশারের যৌন অসদাচরণে জনসনের প্রশ্রয়ের কথা ফাঁস হলে দলের ভেতর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়।
জনসনের পদত্যাগের খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেবার পার্টি নেতা কেইর স্ট্যারমার বলেছেন, এটা দেশের জন্য ভালো খবর। কিন্তু এটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.