বিমানবন্দর থেকে ফিরতে বাধ্য হলেন রাজাপাকসের ভাই

দেশ ছাড়ার উদ্দেশে বিমানবন্দরে গিয়ে বিক্ষোভ ও অসহযোগিতার মুখে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসে। শ্রীলঙ্কার অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে কোনো সেবা দিতে অনীহা জানিয়েছেন।

গণবিক্ষোভের জেরে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে পরিবার

জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার ভোরে কলম্বোর বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিল্ক রুট প্যাসেঞ্জার ক্লিয়ারেন্স টার্মিনালে যান বাসিল রাজাপাকসে। তাৎক্ষণিকভাবে বিমান টিকেট ক্রয়, অভিবাসন ফি ও অন্যান্য সার্ভিস চার্জ পরিশোধের সুবিধা সম্পন্ন এই টার্মিনাল শ্রীলঙ্কার ভিভিআইপি ও ভিআইপিরা ব্যবহার করে থাকেন।

বাসিল রাজাপাকসে সিল্ক রুট টার্মিনালে পৌঁছালে সেখানে উপস্থিত অন্যান্য যাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিমানবন্দরে অভিবাসন ও বহির্গমন বিভাগের কর্মকর্তারাও তাকে সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ডেস্ক ছেড়ে যান। এ অবস্থায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে একপর্যায়ে বিমানবন্দর ছেড়ে যান বাসিল।

অভিবাসন কর্মকর্তারা জানান, সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসে ও তার সঙ্গীদের তারা কোনো সেবা দেননি। দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল ও দুর্যোগপূর্ণ সময়ে লোকচক্ষুর আড়ালে সিল্ক রুট টার্মিনাল হয়ে দেশ ছাড়তে চাওয়া কোনও ভিআইপিকে সেবা দেওয়া হবে না বলে জানান তারা।

যুক্তরাষ্ট্র ও শ্রীলঙ্কার দ্বৈত নাগরিক বাসিল সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ছোট ভাই। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে শ্রীলঙ্কা পড়ুযোজনা পেরামুনার (এসএলপিপি) বিজয়ের পর ক্ষমতার স্বাদ নিতে দেশে ফিরেন তিনি। মাহিন্দার মন্ত্রিসভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ঢালাও কর মওকুফ, ইচ্ছেমতো বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ, রাসায়নিক সার ব্যবহার নিষিদ্ধ করাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। চীনকে ছেড়ে ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ভূমিকা রাখেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বর্তমান আর্থিক দুর্দশার জন্য বাসিলকে দায়ী করেন অনেকে।

শ্রীলঙ্কা অভিবাসন কর্মকর্তা সমিতির প্রেসিডেন্ট কেএএএস কানুগালা বলেছেন, সিল্ক রুট টার্মিনালে অভিবাসন ও বহির্গমন ডেস্কের কর্মকর্তারা দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক ভিআইপিদের সেবাদান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

তিনি বলেন, বিরাজমান পরিস্থিতিতে সাবেক অভিজাতদের অনেকেই দলে দেলে দেশ ছাড়তে চাইবে। এজন্যই সিল্ক রুট টার্মিনালে সেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ৬-২০ জুন শ্রীলঙ্কায় হরতাল চলাকালে অভিবাসন ও বহির্গমন বিভাগের কর্মকর্তারা কলম্বো বিমানবন্দরের স্পেশাল গেস্ট লাউঞ্জ ও সিল্ক রুট টার্মিনালে সেবাদান বন্ধ রেখেছিলেন।

পৃথক খবরে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসে ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর অজিথ নিভার্দ কাব্রালসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে শ্রীলঙ্কার সুপ্রিম কোর্টে আজ একটি পিটিশন রুজু করা হয়েছে।

সিল্ক রুট টার্মিনালের ঘটনা সম্পর্কে বাসিল রাজাপাকসের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে একধিকবার যোগাযোগ করেও কোনও সাড়া পায়নি বিবিসি সিংহলিজ সার্ভিস। তবে এসএলপিপির একটি সূত্র পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের জেরে গণবিক্ষোভে ক্ষমতা হারিয়েছে শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে পরিবার। গত দুই দশক ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রাখা পরিবারটির আধ ডজন সদস্য মাহিন্দা রাজাপাকসের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর আগে মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা, পার্লামেন্ট সদস্য এবং সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান পদে উপবিষ্ট হয়েছিলেন এ পরিবারের ৪০ জন সদস্য।