স্যার মোহাম্মদ ফারাহ: পাচার হয়ে আসা এক সোমালি বালক
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা অ্যাথলেট মোহাম্মদ ফারাহ। ঝুলিতে আছে চার-চারটি অলিম্পিক স্বর্ণপদক। লন্ডন ও রিও অলিম্পিকে ইংল্যান্ডের হয়ে এসব পদক জয় করেন তিনি। পেয়েছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ সম্মান ‘স্যার’ উপাধি। তবে সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, মোহাম্মদ ফারাহ তার আসল নাম নয়, তার প্রকৃত নাম হোসেইন আবদি কাহিন। খবর বিবিসি।
আরেকটি পদক জয়
দীর্ঘদিন ধরে চেপে রাখা সত্য বিবিসির মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে এনেছেন মোহাম্মদ ফারাহ। তিনি জানান, তাকে শিশু বয়সেই অবৈধভাবে ব্রিটেনে পাচার করা হয়েছিল। তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল এবং সেটি করা হয়েছিল তার পরিবারের একজনের সহায়তায়। ব্রিটেনে আসার পর তাকে মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়।
৩৯ বছরের এই দৌড়বিদ নিজের ব্যাপারে স্পষ্টভাবেই বলেন, সবাই আমাকে যে মানুষ বলে জানে, আমি সেই মানুষ নই। এটাই সত্যি, এটাই বাস্তবতা। এর জন্য মাসুল যাই দিতে হোক না কেন, আমাকে সত্যিটা বলতেই হবে। আমি অতীতে যাই বলে থাকি, সত্যি এটাই যে আমার বাবা-মা কেউ কখনও ব্রিটেনে থাকেনি।
মায়ের সাথে মোহাম্মদ ফারাহ
বিবিসিকে তিনি বলেন, তার পরিবারের দেওয়া নাম ছিল হোসেইন আবদি কাহিন। কিন্তু যারা তাকে জিবুতি থেকে ব্রিটেনে নিয়ে আসেন তারা নতুন নাম রাখে মোহাম্মদ ফারাহ। ব্রিটেনে নিয়ে আসার পর তাকে একটি পরিবারের শিশুদের দেখাশোনার কাজ দেওয়া হয়।
জীবনের দৌড় সম্পর্কে ফারাহ বলেন, যখন তার বয়স মাত্র চার বছর, তখন সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে তার পিতা আবদি নিহত হন। এরপর যখন তাকে জিবুতির একটি পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তখন তার বয়স ছিল আট থেকে নয় বছর। পরে অপরিচিত একজন নারী তাকে ব্রিটেনে নিয়ে আসেন।
ওই নারী ফারাহকে বলেছিলেন, কিছু আত্মীয়ের সঙ্গে থাকার জন্য তাকে ইউরোপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একথা শুনে স্বভাবতই তিনি বেশ উত্তেজিত ছিলেন। ফারাহ বলেন, আমি এর আগে কখনও বিমানে চড়িনি। কিন্তু আমার ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে মোহাম্মদ ফারাহ নামে তাকে ব্রিটেনে নিয়ে আসা হয়।
এরপর থেকেই তার পরিচয় পাল্টে যায়। তাকে মোহাম্মদ ফারাহ নামে পরিচয় দিতে বলা হয় এবং তার কাছে আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোাগযোগ করার যেসব কাগজপত্র ছিল তা নিয়ে ছিড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়।
ওই পরিবারের গৃহস্থালীর কাজ ও শিশুদের দেখাশোনার বিনিময়ে ফারাহ খাবার পেতেন। হুমকি দেওয়া হতো, তুমি যদি কখনও তোমার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাও তাহলে কোনো বিষয় নিয়ে মুখ খুলবে না। ফলে ফারাহ প্রায়ই বাথরুমের দরজা বন্ধ করে কাঁদতেন।
ব্রিটেনে আসার পর প্রথম কয়েক বছর তাকে স্কুলে যেতে দেওয়া হয়নি। ১২ বছর বয়সে ফেল্টহ্যাম কমিউনিটি কলেজের সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। তখন স্কুলের লোকজনকে বলা হয়েছিল, তিনি সোমালিয়া থেকে আগত একজন শরণার্থী।
ওই স্কুলে তিনি মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। তবে অ্যাথলেটিক ট্রাকে তার অবস্থান ছিল অন্যরকম। ফারাহর শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষক অ্যালান ওয়াটকিন্সন বলেন, এই শিশুটি যখন ট্র্যাকে নামে তখনই তিনি তার মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মনে হচ্ছিল একমাত্র যে ভাষাটি সে বুঝতে পারছে তা হলো শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলার ভাষা।
ফারাহও একই কথা বলেন। তার কথায়, তখন খেলাধুলাই ছিল বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। কারণ এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য একমাত্র যে জিনিসটি আমি করতে পারতাম তা হলো বের হয়ে এসে দৌড়ানো।
একপর্যায়ে ফারাহ তার শিক্ষক ওয়াটকিন্সনের কাছে তার আসল পরিচয়সহ সবকিছু খুলে বলেন। ওয়াটকিন্সন সোশ্যাল সার্ভিস বিভাগের সাথে যোগাযোগ করলে, তাকে লালন-পালনের জন্য একটি সোমালি পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। এরপর থেকে পরিস্থিতি উন্নত হতে শুরু করে।
ফারাহ ১৪ বছর বয়স থেকে একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে খ্যাতি কুড়াতে শুরু করেন। ইংল্যান্ডের স্কুলগুলোর হয়ে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তাকে লাটভিয়ায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তার ছিল না। পরে ওয়াটকিন্সন তাকে মোহামেদ ফারাহ নামেই ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে সাহায্য করেন। ২০০০ সালের জুলাই মাসে তাকে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।
মোহামেদ ফারাহ ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকস এবং ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকসে ৫,০০০ ও ১০,০০০ মিটার দৌড়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন। এ কারণে ব্রিটেনের রানী তাকে সম্মানসূচক নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত করেন। তার নাম হয়ে যায় স্যার মোহাম্মদ ফারাহ।
ফারাহর স্ত্রী তানিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় স্কুলে। ২০১০ সালে বিয়ে করার আগে ফারাহ তাকে সব সত্যি বলেছিলেন। ফারাহ তার এক সন্তানের নাম রেখেছেন হুসেইন, যেটা তার আসল নাম। এক ফাঁকে সোমালিয়া গিয়ে তিনি মায়ের সঙ্গেও দেখা করেছেন। তার মা আইশা জানতেনই না, ফারাহকে ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমার পরিবারের কেউ ছেলেকে বিক্রি করে দিতে পারে।
এদিকে যে ফারাহর নাম ব্যবহার করে হোসেইনকে ইংল্যান্ড নিয়ে আসা হয়েছিল, সেই আসল ফারাহর দৌড়ে কোনও উৎসাহ নেই। অলিম্পিকে চার-চারটি সোনা জেতা ফারাহ যখন আসল ফারাহকে বলেন, আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি তোমার নাম ব্যবহার করেছি। তখন আসল ফারাহ বলেন, ঠিক আছে। তুমি তো আমার ভাই-ই।
উল্লেখ্য, মোহাম্মদ ফারাহকে নিয়ে বিবিসির একটি ডকুমেন্টারি আজ বুধবার প্রচারিত হবে। সেখানে এসব বিষয় আরও বিস্তারিতভাবে উঠে আসবে।
ইংল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে তারা স্যার মোহাম্মদ ফারাহর বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেবে না। এমনকি কোনো ধরনের অভিযোগেও অভিযুক্ত করবেন না।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.