ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল, শ্রীলঙ্কায় কারফিউ উপেক্ষা করে বিক্ষোভ

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে রাতের আঁধারে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্লামেন্ট স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ার্দেনা। শ্রীলঙ্কার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে জারি করা কারফিউ উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভে সমবেত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

গোতাবায়া রাজাপাকসে ও রনিল বিক্রমাসিংহে

গতকাল মঙ্গলবার দিনগত রাত ৩টার দিকে শ্রীলঙ্কার সশস্ত্র বাহিনীর একটি বিমানে চেপে মালদ্বীপ পৌঁছেছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। এর আগে দুদিন তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার উদ্দেশে কলম্বোর কাতুনায়েকে সেনাঘাঁটিতে অপেক্ষা করে ব্যর্থ হন। নিজের পাসপোর্ট ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের জন্য তিনি অভিবাসন ও বহির্গমন বিভাগের কর্মকর্তাদের সেনা ঘাঁটিতে ডাকলেও কেউ তার আহ্বানে সাড়া দেননি।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদাধিকার বলে তিনি অভিবাসন ও বহির্গমন বিভাগের কর্মকর্তাদের ডাকতে পারেন বলে দাবি করেন রাজাপাকসে। অন্যদিকে কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো ভিভিআইপি ও ভিআইপিকে দেশ ছাড়তে সহযোগিতার জন্য তারা প্রস্তুত নন। এভাবে দুদিন টানাপড়েনে আমিরাতগামী পাঁচটি ফ্লাইট মিস হবার পর ভোররাতে সামরিক বিমানে দেশ ছাড়েন শ্রীলঙ্কার সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।

এর আগে খবর বেরোয়, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একইসঙ্গে তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে চলেছেন। জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রস্তুতি হিসেবে কলম্বোর ফ্লাওয়ার রোডে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর আশেপাশে বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয় এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে কারফিউ ঘোষণা করা হয়।

কলম্বোর গালে ফেস এলাকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিক্ষোভস্থলের আকাশে টহল দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার। গত ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভে এবারই প্রথম বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হলো।

রনিল বিক্রমাসিংহের প্রেসিডেন্ট হবার বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছেন শ্রীলঙ্কার অনেকে। মানবাধিকার সংগঠক ও আইনজীবী হেজাজ হিজবুল্লাহ বলেছেন, কেবলমাত্র প্রেসিডেন্টের পদ খালি হলেই প্রধানমন্ত্রী ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, এখনও সেটা হয়নি। এ অবস্থায় কারফিউ ও জরুরি অবস্থার নাম করে যেসব গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে, সেগুলো মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন ছাড়া আর কিছু নয়।

বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট যদি প্রধানমন্ত্রীকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেন অথবা প্রেসিডেন্টের পদ যদি খালি হয় অথবা প্রধান বিচারপতি ও স্পিকার পরামর্শ করে যদি প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য মনে করেন, কেবলমাত্র সেক্ষেত্রেই রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা চর্চা ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। কাজেই তার ঘোষিত কারফিউ ও জরুরি অবস্থা বেআইনি।

কারফিউ উপেক্ষা করে কলম্বোর রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ছুঁড়ছে নিরাপত্তা বাহিনী। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রায়ত্ব রূপবাহিনী কর্পোরেশন টেলিভিশনের কার্যালয়ে ঢুকে পড়ায় টিভি সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করেছেন বলে পার্লামেন্ট স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ার্দেনা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন। তবে আজ ১৩ জুলাই বুধবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের পূর্বঘোষিত তারিখ হলেও তিনি পদত্যাগ করেছেন কি-না, সে সম্পর্কে স্পিকার কিছু বলেননি।

জানা গেছে, গোতাবায়া রাজাপাকসে তার কথিত চূড়ান্ত গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত তার চূড়ান্ত গন্তব্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। মালদ্বীপ থেকে প্রথমে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশে যাবেন। সেখান থেকে রাত আটটা নাগাদ তিনি চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছাবেন। এরপর তৃতীয় একটি পক্ষ তার স্বাক্ষরযুক্ত পদত্যাগপত্র পার্লামেন্ট স্পিকারের কার্যালয়ে পৌঁছে দেবে।

সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদাধিকার বলে গ্রেপ্তার এড়ানোর সুযোগ রাখেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। তিনি চাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার আগে এমন গন্তব্যে পৌঁছতে যেখানকার সরকার তার সম্ভাব্য গ্রেপ্তারের বিষয়ে শ্রীলঙ্কাকে সহযোগিতা করবে না এবং এ সংক্রান্ত চাপ উপেক্ষা করবে।

এদিকে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে মালদ্বীপে যাবার সুযোগ করে দিতে ভারত সরকার কলম্বো ও মালের মধ্যে দূতিয়ালি করেছে বলে শ্রীলঙ্কায় অনেকে বলাবলি করছেন। বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে কলম্বোর ভারতীয় হাইকমিশন বলেছে, ভারত সরকার শ্রীলঙ্কার জনগণের পক্ষে রয়েছে।

রাজাপাকসেকে অবিলম্বে বহিষ্কারের দাবিতে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছেন সেদেশের রাজনৈতিক কর্মীরা। মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম নেতা মোহাম্মদ নাশিদ রাজাপাকসেকে মালে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।

কেন এবং কার উদ্যোগে রাজাপাকসেকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে তা জানতে মালদ্বীপের পার্লামেন্ট মজলিসে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন বিরোধী দলের একাধিক এমপি। ক্ষমতাসীন মালদ্বীপ ন্যাশনাল পার্টি বলেছে, এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান পার্লামেন্টে ব্যাখ্যা করা হবে।