ইউরোপে পুড়ছে বনভূমি, মরছে মানুষ

গ্রীষ্মের দাবদাহে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপজুড়ে ভয়াবহ দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত এসব দাবানল নেভার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, কয়েকটি দেশে ভয়াবহ দাবানলের কারণে আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারে। গত কয়েকদিনে এসব দাবানলে প্রায় চারশ লোকের মৃত্যু হয়েছে। খবর এএফপি।

ইউরোপজুড়ে দাবানল

জানা গেছে, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন ও গ্রিসের বিভিন্ন জায়গায় দাবানল চলছে। হাজার হাজার হেক্টর এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে হাজার হাজার পরিবারকে। তারপরও ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকজন কর্মীসহ মারা গেছেন কয়েকশ মানুষ।

কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপে এটি দ্বিতীয় দাবদাহের ঘটনা। বিজ্ঞানীরা এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করে বলেছেন, আগামীতে আরও ঘন ঘন এ ধরনের চরম আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে হবে।

দাবানল নেভানোর চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস কর্মী

ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিম গিরোন্ডে অঞ্চলে যে দাবানল সৃষ্টি হয়েছে তাতে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার হেক্টর এলাকার বনাঞ্চল পুড়ে গেছে। পাঁচটি বিমান ও ফায়ার সার্ভিসের ১ হাজার ২০০ কর্মী সেখানে দাবানল নেভাতে কাজ করলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। এছাড়া দেশটির আরো কয়েকটি স্থানে দাবানল চলছে। এর ফলে গতকাল ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ায়। আর দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা উঠে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আজ সোমবার সেখানকার তাপমাত্রা রেকর্ড ভাঙতে পারে।

পতুর্গালের অন্তত ২০টি স্থানে দাবানল রয়েছে। এরই মধ্যে ১৫ হাজার হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। নতুন আরো দাবানল সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সেখানে রেকর্ড ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠে। দাবানলের কারণে সেখানে সপ্তাহব্যাপী জরুরি অবস্থা চলছে। সরকার তা আরো বাড়ানোর চিন্তা করছে।

স্পেনের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক ডজন এলাকায় দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে। এতে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার হেক্টর এলাকা ধ্বংস হয়েছে। দাবানলের কারণে দেশটির কিছু কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।

এছাড়া গ্রিসের ক্রিট দ্বীপে, মরক্কোর উত্তরাঞ্চলে পাহাড়ি এলাকা, দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্ক ও ক্রোয়েশিয়ার অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলের কিছু এলাকাতেও দাবানলে বনভূমি-লোকালয় পুড়ছে। দাবানলের কারণে ইতালি সরকার পো উপত্যকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন, আরও তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। শিল্প যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে পৃথিবী ইতিমধ্যেই প্রায় ১ দশমিক ১ সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে। বিশ্বের সরকারগুলো কার্বন নির্গমন রোধের ব্যাপারে সচেষ্ট না হলে এ তাপমাত্রা ভবিষ্যতে আরো বাড়তে থাকবে। যার ফলশ্রুতিতে দাবানলের মতো দুর্যোগও আরো বাড়বে।