২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর দিনটি ছিল রোববার। সময় সকাল ৯টা। রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে ছাত্রলীগের বিবাদমান দুটি পক্ষের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল। এ সময় ধাওয়া খেয়ে পথচারী বিশ্বজিৎ দৌড়ে প্রথমে নিকটস্থ ভবনের দোতলার একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে আশ্রয় নেন।

the accused who was sentenced to life in the biswajit murder was arrestedবিশ্বজিৎকে হত্যা: ১০ বছর পর গ্রেপ্তার এক আসামি

পরে সেই দুস্কৃতকারীরা ওই ক্লিনিকে বিশ্বজিতের ওপর হামলা চালিয়ে নির্বিচারে কিল-ঘুষি-লাথি মারতে থাকে। তার গায়ে লৌহ শলকা দিয়ে সজোরে আঘাত করতে থাকে। আহত বিশ্বজিৎ প্রাণ বাঁচাতে পাশের আরেকটি ভবনে ঢুকে পড়ে।

দুস্কৃতকারীরা সেখানেও গিয়ে বিশ্বজিতের ওপর হামলা চালায়। ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল তাকে লৌহ শলাকা এবং চাপাতি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। আঘাতে তার কাপড় ছিঁড়ে যায় ও সারা শরীরে রক্তের বন্যা বয়ে যায়। সে আবার পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আঘাত অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে শীর্ণকায় বিশ্বজিৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচানোর শেষ চেষ্টায় সে উঠে দৌড় দেয়, কিন্তু শাঁখারী বাজারের একটি গলিতে গিয়ে ঢলে পড়ে যায়।

পরে মুমূর্ষু অবস্থায় এক রিকশাওয়ালা তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক বিশ্বজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিশ্বজিৎ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর গ্রামের দাসপাড়া মহল্লার বাসিন্দা অনন্ত দাসের ছেলে। সে ২০০৬ সালে ঢাকার শাঁখারী বাজারে নিউ আমন্ত্রণ টেইলার্সে দর্জির কাজ শুরু করে। বিশ্বজিৎ বিবদমান দুটি পক্ষের কোনটির সাথেই জড়িত ছিলেন না। তিনি জীবিকার তাগিদে ঘটনার সময় তার লাল বাজারের বাসা থেকে শাঁখারীবাজারে নিজের কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন।

এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। ২০১৩ সালের ৫ই মার্চ  আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়। মামলাটি পরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মামলার রায়ে ২১ আসামির মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।

নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদন্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অপর দুজনকে খালাস দিয়ে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট মহামান্য হাইকোর্ট রায় দেন। পরবর্তীতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে যে দুজন আপিল করলে তারা খালাস পান।

সেই চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. কামরুল হাসানকে ১০ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। র‍্যাব-৩ এর পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি আরও জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব ৩ জানতে পারে একজন আসামি রাজধানীর পল্টনের শান্তিনগর এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি অভিযানিক দল গত ১৭ জুলাই  রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. কামরুল হাসানকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে।

আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, ঘটনার দিন প্রতিপক্ষ দলের সদস্য ভেবে তাকে বিশ্বজিৎকে ধাওয়া করা হয়। তারপর মামলার আসামিরা তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। বিশ্বজিৎ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তারপর সে জানতে পারে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে এবং এই ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়েছে। এরপর সে পার্শ্ববর্তী দেশে তার নানার বাড়ির আত্মীয়ের আশ্রয়ে আত্মগোপন করে। মামলার অভিযোগ পত্র দাখিলের দুইমাস পর সে বাংলাদেশে ফিরে আসে।

র‍্যাব আরও জানায়, কামরুল ১৯৯৪ সালে তার পিতার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত স্বপরিবারে ঢাকায় বসবাস করত। পিতার মৃত্যুর পর তারা গ্রামের বাড়ি চলে যায়। তারা তিন বোন এক ভাই। ভাইবোনদের মধ্যে ধৃত কামরুল সর্বকনিষ্ঠ। সে নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি স্কুল হতে বিজ্ঞান বিভাগ হতে এসএসসি এবং একটি কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করে। ২০০৫ সালে সে ঢাকার একটি কলেজে একাউন্টিং সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সাথে যুক্ত ছিল। ২০১১ সালে সে তার সহপাঠীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

২০১৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে ফিরে এসে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় সে তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করতে শুরু করে। এ সময় সে জীবিকার সন্ধানে বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে। প্রথমে সে ছদ্মনামে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করে। এরপর তার সাথে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের মূলহোতা  খোকন ও সোহেলের সাথে পরিচয় হয়। ২০১৪ সাল হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের নামে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিকট প্রশ্ন বিক্রি করে পঞ্চাশ লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করে।

অবৈধ উপার্জনের টাকা দিয়ে সে কক্সবাজার সদর এলাকায় হোটেল ব্যবসা চালু করে। করোনা মহামারির লকডাউনের সময় লোকসানের কারণে সেই ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে তার দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.