তুর্কি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরাকে নিহত ৮, আহত ২৪

ইরাকের আধা-স্বায়ত্বশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলের একটি পর্যটনকেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ৮ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। ইরাক সরকার এ ঘটনার জন্য তুরস্ককে অভিযুক্ত করেছে এবং আঙ্কারায় নিযুক্ত ইরাকি রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে পাঠিয়েছে। অন্যদিকে তুর্কি সরকার এ হামলায় সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে বলেছে, কুর্দি সন্ত্রাসীরাই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।

তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন ইরাকের প্রভাবশালী নেতা মুকতাদা আল সদর

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার বিকেলে কুর্দিস্তানের দারকার মহকুমার জাখো সিটিতে উপর্যুপরি চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। এ সময় সেখানে রাজধানী বাগদাদ থেকে বেড়াতে যাওয়া প্রায় ২০০ সদস্যের একটি পর্যটক দল অবস্থান করছিল। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ৮ জন পর্যটক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।

জাখো সিটি মেয়র মুহসিন বাশির কুর্দিস্তান টুয়েন্টিফোর টেলিভিশনকে বলেছেন, নিষিদ্ধ-ঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সদস্যরা ঘোরাঘুরি করছে এ মর্মে অভিযোগ তুলে তুর্কি সেনাবাহিনী তাদের সীমান্তবর্তী ঘাঁটি থেকে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে।

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-কাজিমী এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ঘটনা তদন্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হাসানের নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটিকে তিনি গতকাল সন্ধ্যায় কুর্দিস্তানে পাঠিয়েছেন।

ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইরাকি সার্বভৌমত্বের এমন স্পষ্ট লঙ্ঘনের জন্য তুরস্ককে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক জবাব দেওয়া হবে এবং এ হামলার বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করা হবে।

জানা গেছে, বছরের এ সময়টায় গরমের তীব্রতা বেশি থাকায় ইরাকের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ তুলনামূলক কম উষ্ণ কুর্দিস্তান অঞ্চলে বেড়াতে যান। জাখো, পাখেরাসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে এ মৌসুমে পর্যটকের উল্লেখযোগ্য সমাগম থাকে।

পর্যটনকেন্দ্রে হামলার ঘটনায় তুরস্কের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে ইরাকের রাজনৈতিক দলগুলো। বুধবার রাতভর বিক্ষোভ করেছেন ইরাকের বিভিন্ন শহরের মানুষ। দেশটির সরকার নিহতদের স্মরণে আজ বৃহস্পতিবার একদিনের জাতীয় শোক পালন করছে।

রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, জাখো সিটিতে হামলার প্রতিবাদে একদল বিক্ষোভকারী রাজধানী বাগদাদে তুরস্কের জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে প্রতিবাদ জানায়। শহরের মধ্যাঞ্চলে আল-ওয়াজিরিয়া এলাকায় তুর্কি দূতাবাসের সামনে রাতভর বিক্ষোভ করে কয়েক হাজার মানুষ।

ইরাকের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল তাহসিন আল-খাফাজি বলেছেন, দোহুক প্রদেশে হামলার ঘটনা দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি আক্রমণের শামিল। ইরাকি সশস্ত্র বাহিনী এ ধরণের আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেবে।

প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা মুকতদা আল সদর তুরস্কের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করার প্রস্তাব দিয়ে বলেছেন, তুরস্ক যা করেছে সেটা ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। পানির সরবরাহ লাইন প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

সামাজিক মাধ্যমে প্রাপ্ত ফুটেজে দেখা যায়, নাজাফ শহরে তুরস্কের ভিসা অফিসের সামনে অবস্থান নেওয়া একদল বিক্ষোভকারী ভবনটির দেওয়ালে তুর্কি প্রেসিডেন্টের ছবি-সম্বলিত পোস্টার সেঁটে উপরে লাল রং দিয়ে ‘এরদোগান একজন খুনি’ লিখে দিয়েছে।

একইভাবে, বন্দরনগরী বসরায় বিক্ষোভকারীরা তুর্কি কনস্যুলেটের ভিসা অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। ইরাকি মিলিশিয়া বাহিনী ‘হাশদ আল-শাবির নির্দেশে’ এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তারা জানায়।

এদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় সেদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইরাকি কর্মকর্তাদের তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এ বিষয়ে ইরাকের প্রতিক্রিয়া এখনও জানা যায়নি।