খেরসনেই নির্ধারিত হতে চলেছে যুদ্ধের চুড়ান্ত ফলাফল

দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন শহরেই নির্ধারিত চলেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফল। সেপ্টেম্বরের শুরুতে খেরসনে গণভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। তার আগে শহরটি মুক্ত করার উপর পশ্চিমা দেশগুলো থেকে নতুন করে সামরিক সহযোগিতা পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে বলে মনে করেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, সামরিক সহযোগিতা অব্যাহত না থাকলে ইউক্রেনের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

খেরসন থেকে রুশ সৈন্যদের হটাতে বড় ধরণের পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, খেরসন থেকে রুশ সৈন্যদের হটাতে বড় ধরনের পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। খেরসনের পশ্চিম সীমান্তে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধরত অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন মেরিন সেনা মাইকেল মালদোনাদো বলেছেন, আমরা খেরসনকে পরবর্তী ফাল্লুজা হিসেবে দেখছি। বাগদাদের পশ্চিমে অবস্থিত ফাল্লুজা শহর ইরাকি গেরিলাদের দখলমুক্ত করতে যেভাবে পাল্টা আক্রমণ চালানো হয়েছিল, খেরসনে একইরকম অভিযান হবে বলে মন্তব্য করেন মালদোনাদো।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়ারমুক বলেছেন, খেরসনে প্রহসনমূলক গনভোটের আগেই শহরটি দখলমুক্ত করতে হবে। এজন্য ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রস্তুতি চূড়ান্ত করছে। আমাদের হাতে মাত্র কিছুদিন সময় আছে।

কিয়েভের নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, গণভোট আয়োজন করতে পারলে রাশিয়া খেরসনকে নিজেদের ভূখণ্ড ঘোষণা করবে। সেক্ষেত্রে দেশটি খেরসনের প্রতিরক্ষায় সর্বশক্তি মোতায়েন করবে। এরইমধ্যে শীত এসে গেলে ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার গ্যাসের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হবে। তখন তারা ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য দিয়ে রাশিয়াকে ঘাঁটাতে চাইবে না। তাছাড়া খেরসন দখলমুক্ত করতে ব্যর্থ হলে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সহযোগিতা করার উৎসাহ হারাবে।

খেরসনে রুশ অবস্থান লক্ষ্য করে পাশ্ববর্তী নিকোলায়েভ থেকে নিয়মিত গোলাবর্ষণ করছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে রাশিয়ার বিমান বাহিনী ও দূর পাল্লার অস্ত্রশক্তির বিপরীতে তারা সেভাবে সুবিধা করতে পারছে না। সোমবার রাতে রুশ বিমান হামলায় নিকোলায়েভে মোতায়েন ইউক্রেনীয় বাহিনীর ২৮ মেকানাইজড ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল ভিতালি গুলায়েভসহ কমপক্ষে চারজন পদস্থ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। নিহত অন্যরা হলেন- লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলেক্সান্ডার দাইনেকো, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ভ্যালেন্টিন সের্গিয়েঙ্কো ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল ভিতালি বনদারেভ।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিক্ষিপ্ত গোলা ও ড্রোন হামলা ঠেকাতে খেরসনে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সেখানে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে।

ইউক্রেনীয় সূত্রগুলো বলছে, রুশ বাহিনী খেরসনে আরও কয়েকটি সেনা ইউনিট মোতায়েন করেছে। খেরসন শহর ও সংলগ্ন অঞ্চলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কয়েকটি স্তুরে ঢেলে সাজানো হচ্ছে, যাতে ইউক্রেনীয় বাহিনী সেখানে প্রবেশ করতে পারলেও মাঠে-ময়দানে ও রাস্তাঘাটে প্রলম্বিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-সিক্স ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে এ তথ্য দিয়েছে বলে সূত্র জানায়।

খেরসনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ইউক্রেনের হামলা অব্যাহত রয়েছে। চলতি সপ্তাহে স্থানীয় নোভা খাকভকা জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে তিনবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বাঁধ ভেঙে পড়লে কি হবে সে বিষয়ে মঙ্গলবার একটি সিমুলেশন প্রেজেন্টেশন করেছে ইউক্রেনের সেনাসদর। পৃথক ঘটনায় গতকাল ইঙ্গুলেতজ নদীপথে তিনটি নৌযান নিয়ে খেরসনের নিকটবর্তী বেলোগোরকায় অবতরণের চেষ্টা চালায় ইউক্রেনীয় বাহিনী। রুশ সৈন্যদের বাধা পেয়ে তারা ফিরে যায়।

ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চল থেকে খেরসনে যাতায়াতের অবলম্বন তিনটি সেতু। দনিপার উপর নির্মিত আন্তোনভকা সেতুতে গতকাল হাইমারস রকেট ছুঁড়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তিনটি সেতু ধ্বংস করতে পারলে খেরসনে মোতায়েন প্রায় ১৫ হাজার রুশ সৈন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

এর আগে খেরসন ও জাপরোঝঝিয়ায় রাশিয়াপন্থী প্রশাসনের কর্মকর্তারা রুশ ফেডারেশনে যোগদানের প্রশ্নে সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধেই গণভোট করার ঘোষণা দেন। জাপরোঝঝিয়ার সিভিল-মিলিটারি প্রশাসনের সদস্য ভ্লাদিমির রজভ বলেছেন, জাপরোঝঝিয়া ও খেরসনে একইদিনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।

গণভোটের পর জাপরোঝঝিয়ায় রুশ সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি গড়ার আভাস দিয়ে তিনি বলেন, গণভোটে হ্যাঁ-বোধক সিদ্ধান্ত এলে আমরা চাইব জাপরোঝঝিয়ায় রুশ সেনাবাহিনীর একটি বড় ধরনের ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করা হোক। ওই ঘাঁটি বহিঃশত্রুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা হয়ে থাকবে।