পেলোসির সফরসূচি প্রকাশ, চীন বলেছে প্রস্তুত, সতর্কাবস্থায় তাইওয়ান

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তাইওয়ান সফরের পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের কর্মকর্তারা। তাইওয়ানে তার সফরসূচি প্রকাশ করেছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। এদিকে চীন আবারও এ সফরের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে। চীনের কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ান প্রণালী ও পূর্ব চীন সাগরে অবস্থান নিয়েছে। তাইওয়ানের সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্যর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

আগামীকাল রাতে তাইওয়ান অবস্থান করবেন ন্যান্সি পেলোসি

তাইওয়ানের পররাষ্ট্র কর্মকর্তারা বলেছেন, ন্যান্সি পেলোসির সফরের বিষয়ে তারা মার্কিন সরকারের কাছ থেকে একটি ‘নোটিশ অব অ্যাডমিশন’ পেয়েছেন। পেলোসি মঙ্গলবার রাতে তাইপে পৌঁছবেন। এর বেশি কিছু তারা জানাতে রাজি নন।

স্থানীয় লিবার্টি টাইমস জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১০:৩০ মিনিটে ন্যান্সি পেলোসিকে বহনকারী বিমান তাইপের সংশান বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। রাতে তিনি গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে অবস্থান করবেন। পরদিন বুধবার সকালে তিনি তাইওয়ানের পার্লামেন্টে যাবেন এবং প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনসহ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন, আমরা বারবার এ সফরের বিষয়ে তীব্র বিরোধিতার কথা জানিয়েছি। আমরা আবারও যুক্তরাষ্ট্রকে বলছি যে চীন অপেক্ষা করছে। এরপরও উসকানিমূলক এ সফর এগোলে আমাদের সামরিক বাহিনী বসে থাকবে না।

পেলোসি তাইওয়ান সফর করলে চীন কি ধরনের পদক্ষেপ নেবে এ মর্মে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ঝাও লিজিয়ান বলেন, তিনি যদি এ সফরের সাহস দেখান তাহলে আপনারাও অপেক্ষা করুন, কি হয় দেখুন।

চীনের সামরিক বাহিনী পিএলএর ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড ওয়েইবোতে নিজেদের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও আপলোড করেছে। চীনের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক বাহিনীর শক্তিমত্তা ফুটিয়ে তোলা ওই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে- ‘দেশের দিকে আগুয়ান শত্রুকে কবর দিতে প্রস্তুত।’

চীনের বিমানবাহী রণতরী শানদং সোমবার সন্ধ্যায় হাইনান প্রদেশের নৌ ঘাঁটি থেকে অজ্ঞাত গন্তব্যের দিকে যাত্রা করেছে। ডেস্ট্রয়ার নানকিং ও ফ্রিগেট আনিয়াং পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ান উপকূলের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থান করছে। চীনা নৌ বাহিনীর যুদ্ধজাহাজগুলোর তৎপরতা বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

পিএলএ জানিয়েছে, ২ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে ৬ আগস্ট শনিবার পর্যন্ত দক্ষিণ চীন সাগরের চারটি ক্লোজড এরিয়ায় নৌ বাহিনীর মহড়া চলবে। ফুজিয়ান প্রদেশের নৌ নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ বলেছে, হাইসুন-সিক্স নামে একটি নজরদারি জাহাজ ৬ আগস্ট পর্যন্ত তাইওয়ান প্রণালীতে পাহারা দেবে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সামরিক বাহিনীর সব সদস্যর ছুটি বাতিল করেছে এবং ‘যুদ্ধপ্রস্তুতির জন্য’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করার ঘোষণা দিয়েছে। তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।

এর আগে এক বিবৃতিতে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, চীনের বিমান বাহিনীর চারটি জে-১৬ জঙ্গিবিমান সোমবার বিকেলে তাইওয়ানের বিমান-প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ এলাকায় প্রবেশ করেছে। চীনা বিমানগুলোকে আসতে দেখে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী সতর্কতামূলক বেতারবার্তা পাঠিয়েছে ও বিমান-বিধ্বংসী মিসাইল মোতায়েন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীনা সামরিক বাহিনীর কোনো ধরণের অস্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে তাইওয়ান ও আশেপাশের এলাকায় গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সম্ভাব্য যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নজরদারি ও আড়িপাতা হচ্ছে। সফরকালে পেলোসির নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ জানিয়েছে, তাইওয়ানের কাছে বিমানবাহী রণতরী, রিফুয়েলিং উড়োজাহাজসহ নানা ধরণের শক্তি সমাবেশ করছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। মার্কিন বিমান বাহিনীর পারসোনেল রিকভাবি প্ল্যাটফর্ম কমব্যাট কিং-টু’র দুটি এইচসি-১৩০ উড়োজাহাজ আলাস্কার অ্যাংকোরেজ থেকে জাপানের ওকিনাওয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। পাশাপাশি অনেকগুলো কেসি-১৩৫ স্ট্র্যাটোট্যাঙ্কারস (আকাশে উড্ডয়নরত বিমানে জ্বালানি সরবরাহের উগোজাহাজ) তাইওয়ানের কাছে আনা হয়েছে।

দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থানরত পারমাণবিক অস্ত্রবোঝাই রণতরী ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যান, জাপানের ওকিনাওয়ার কাছে থাকা রণতরী ইউএসএস ত্রিপোলি, সাসেবোতে মোতায়েন অ্যামফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপ ইউএসএস অ্যামেরিকাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থানরত বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিঙ্কন ও ল্যান্ডিং হেলিকপ্টার ডক ইউএসএস এসেক্সকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।