ভারতের আপত্তি নাকচ করে শ্রীলঙ্কায় ভিড়েছে সেই চীনা জাহাজ

চীনা নৌবাহিনীর বিশেষায়িত জাহাজ ইউয়ান ওয়াং ফাইভ আজ সকালে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলীয় হাম্বানটোটা বন্দরে নোঙর করেছে। ভারতের উপর্যুপরি আপত্তি সত্ত্বেও উচ্চ প্রযুক্তির জাহাজটিকে নিজেদের বন্দরে নোঙর করার অনুমতি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

চীনা নৌবাহিনীর বিশেষায়িত জাহাজ ইউয়ান ওয়াং ফাইভ

শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানি ও রসদ সংগ্রহের জন্য ইউয়ান ওয়াং ফাইভ আজ থেকে আগামী সোমবার পর্যন্ত এক সপ্তাহ হাম্বানটোটা বন্দরে অবস্থান করবে। গত শুক্রবার কলম্বোর চীনা দূতাবাস জাহাজটিকে হাম্বানটোটা বন্দরে ভিড়তে দিতে শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রতি নতুন করে অনুরোধ জানায়। একদিন পর শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাহাজটি নোঙরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র দেয়।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, অনেকগুলো র‌াডার, ট্র্যাকার ও অন্যান্য বিশেষায়িত যন্ত্রপাতিতে ভরা জাহাজটি স্যাটেলাইটে আড়িপাতা ও আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষায় সহায়তার কাজে নিযুক্ত রয়েছে। পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইউয়ান ওয়াং ফাইভ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারত মহাসাগরে অবস্থান এবং শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করছে।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-সজ্জিত ইউয়ান ওয়াং ফাইভ জরিপ ও পর্যবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত বলে চীনের নৌবাহিনী জানিয়েছে। জাহাজটিতে প্রায় চারশো নাবিক রয়েছেন।

এর আগে জুন মাসে চীনের পক্ষ থেকে শ্রীলঙ্কার কাছে ইউয়ান ওয়াং ফাইভ জাহাজকে নোঙরের সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের আমলে এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় ভারত সরকার কয়েকদফা সাহায্য পাঠানোর পর নয়াদিল্লীর কর্মকর্তারা চীনা জাহাজটিকে ভিড়তে না দিতে কলম্বোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন।

জাহাজটি নোঙর করতে দেওয়ার বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে শ্রীলঙ্কার কাছে আপত্তি জানানো হয়। হাম্বানটোটা বন্দরের মতো কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইউয়ান ওয়াং ফাইভের উপস্থিতি ভারতের সামরিক স্থাপনার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করতে পারে বলে দিল্লীর কর্মকর্তারা জানান।

ভারতের আপত্তির প্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউয়ান ওয়াংয়ের হাম্বানটোটা আগমন বিলম্বিত করতে গত সপ্তাহে চীনা দূতাবাসকে বার্তা পাঠায়। কলম্বোর অবস্থানে হঠাৎ পরিবর্তন টের পেয়ে চীনা দূতাবাস শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য তোড়জোড় করতে থাকে। কলম্বোকে ঘিরে দিল্লী ও বেইজিংয়ের এ দ্বৈরথে চলতি দফায় চীনারাই জিতেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে গত বুধবার শ্রীলঙ্কা সরকার ভারতের আপত্তি অগ্রাহ্য করে পাকিস্তান নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজকে কলম্বো বন্দরে নোঙরের অনুমতি দেয়। চীনে নির্মিত ফ্রিগেট পিএনএস তৈমুর সাংহাই থেকে করাচি যাবার পথে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙরের অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হয়। এরপর পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জাহাজটিকে কলম্বোতে নোঙর করাতে শ্রীলঙ্কার শরণাপন্ন হলে ভারতের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। শ্রীলঙ্কা সরকার ওই আপত্তি অগ্রাহ্য করে জাহাজটিকে নোঙরের অনুমতি দেয়।

সবশেষ খবরে জানা যায়, আজ সকালে শ্রীলঙ্কার প্রভাবশালী এমপি ও সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক প্রধান ফিল্ড মার্শাল শরথ ফনসেকা ইউয়ান ওয়াং ফাইভ জাহাজ দেখতে হাম্বানটোটা বন্দরে যান। ডকে পৌঁছে তিনি করমর্দনের জন্য হাত বাড়ালে ইউয়ান ওয়াং ফাইভের ক্যাপ্টেন ঝাং হংওয়াং তার সঙ্গে হাত মেলাতে ও তাকে জাহাজে ওঠার অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানান।