রুশ দূতাবাসের জমি বরাদ্দ বাতিল করল অস্ট্রেলিয়া

ক্যানবেরায় রাশিয়ার নতুন দূতাবাস ভবনের জন্য কেনা একটি জমির বরাদ্দ বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া। দূতাবাস নির্মাণের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ায় বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ক্যাপিটাল অথোরিটি (এনসিএ)। এ সিদ্ধান্তকে ‘নজিরবিহীন’ ও ‘অত্যন্ত অনভিপ্রেত’ অভিহিত করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া।

ক্যানবেরার গ্রিফিথ এলাকায় রাশিয়ার বর্তমান দূতাবাস

আজ বুধবার সকালে জারিকৃত এক নোটিশে রাশিয়াকে ২০ দিনের মধ্যে প্লট খালি করে দিতে বলেছে এনসিএ। প্রতিক্রিয়ায় এনসিএর এ সিদ্ধান্তকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার বড় ধরণের পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছে নিউজ অস্ট্রেলিয়া।

জানা গেছে, ক্যানবেরা শহরতলীর গ্রিফিথ এলাকায় নিজেদের পুরোনো দূতাবাস ভবন ছেড়ে ডিপ্লোমেটিক জোনে স্থানান্তরের উদ্দেশে রুশ সরকার ২০০৮ সালে শহরের অভিজাত ইয়ারালুমলা এলাকায় একটি প্লট কিনে। অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট ভবন থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে ওই প্লট। এনসিএ কর্তৃপক্ষ ২০১১ সালে রাশিয়াকে ওই জমিতে প্রয়োজনীয় নির্মাণকাজের অনুমোদন দিলেও এখন পর্যন্ত ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারেনি রাশিয়া।

এনসিএর নোটিশে বলা হয়েছে, রুশ ফেডারেশন গ্রিফিথ এলাকায় নিজেদের বিদ্যমান দূতাবাসের পরিবর্তে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ইয়ারালুমলার ৪৪ নম্বর সেকশনের ২৬ নম্বর ব্লকের ইজারা সত্ব কিনে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর এনসিএ ওই প্লটে পূর্ত ও নির্মাণ কাজের অনুমোদন দেয়। ইজারা চুক্তিতে রুশ ফেডারেশন তিন বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্নে রাজি হলেও এখন পর্যন্ত তা শেষ হয়নি।

এতে বলা হয়, এনসিএ অস্ট্রেলিয়ার সব নাগরিকের পক্ষে ডিপ্লোমেটিক প্রেসিঙ্কট ব্যবস্থাপনার কাজ করে থাকে। রুশ ফেডারেশনকে বরাদ্দ দেওয়া ব্লকটি সেন্ট্রাল ক্যানবেরার একটি প্রিমিয়াম সাইট। সেখানে অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ সংরক্ষিত এলাকাটির নান্দনিক সৌন্দর্য, গুরুত্ব ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে।

আরও বলা হয়, রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে বিগত বছরগুলোতে বেশ কয়েকদফা আলোচনার পর এবং নির্মাণকাজ সম্পন্নে নির্দিষ্ট সময়সীমা না পাওয়ায় ‘ইউজ ইট অর লুজ ইট’ নীতির আলোকে জমিটির বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিএ। রুশ ফেডারেশন ওই জমিটি খালি করতে নোটিশ জারির দিন থেকে ২০ দিন সময় পাবে।

ডিপ্লোমেটিক জোনে এমনিতেই জমির স্বল্পতা রয়েছে জানিয়ে এনসিএ বলেছে, বরাদ্দ বাতিলকৃত প্লটগুলো স্বাভাবিক নিয়মে খালি প্লটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে এবং রুশ ফেডারেশন চাইলে নতুন করে বরাদ্দের আবেদন করতে পারবে।

ইয়ারালুমলায় বরাদ্দ বাতিলের সঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং সে বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া সরকারের অবস্থানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দেশটির ফেডারেল প্রশাসনের পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এদিকে এনসিএর সিদ্ধান্তে বিষ্ময় ও হতাশা প্রকাশ করে রুশ দূতাবাস বলেছে, আমরা এ নজিরবিহীন ও অত্যন্ত অনভিপ্রেত সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছি। বিগত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে ইয়ারালুমলার সাইটটিতে ধারাবাহিকভাবে নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে, যার ফলাফল এরইমধ্যে দৃশ্যমান। এমন সময়ে এনসিএর এ সিদ্ধান্ত অবাক করার মতো।

এবিসি জানিয়েছে, এনসিএর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বৈঠকে রুশ কর্মকর্তারা নির্মাণ কাজে শ্লথগতির জন্য অস্ট্রেলিয়ার নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছেন। তারা বলেছেন, ক্রিমিয়া ইস্যুতে ২০১৪ সালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে দূতাবাসের জন্য প্রয়োজনীয় প্রকৌশলী, নির্মাণকর্মী ও সরঞ্জাম নিতে অসুবিধা হচ্ছে। দূতাবাস ভবন, কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন ও সুইমিং পুলসহ প্রয়োজনীয় নির্মাণের জন্য রাশিয়া থেকে পরামর্শক আনার অনুমতি চেয়েও অস্ট্রেলিয়া সরকারের সাড়া মেলেনি বলে তারা অভিযোগ করেন।