এরদোয়ান: সাবধান হোন, আরেকটা চেরনোবিল চাই না

ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারপাশে চলমান সংঘর্ষের বিষয়ে সতর্ক করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো দেশটি সফরে গিয়ে এ প্রতিক্রিয়া দেখান তিনি। খবর আনাদোলু।

এরদোয়ান, জেলেনস্কি ও গুতেরেস

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সাথে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরে একটি সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান বলেন, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারপাশে চলমান সংঘর্ষের বিষয়ে আমরা আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমরা নতুন কোনো চেরনোবিল চাই না।

এরদোয়ান, জেলেনস্কি ও গুতেরেস কূটনৈতিক উপায়ের মাধ্যমে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে আলোচনা করতে এবং সম্প্রতি বিশ্ব বাজারে ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানির জন্য প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাটি অব্যাহত রাখার জন্য ইউক্রেনীয় পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিভিভে একত্রিত হন।

জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

জেলেনস্কি ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার বিষয়ে এরদোয়ান জানান, তারা কৌশলগত অংশীদারিত্ব, সহযোগিতা ও সংহতির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ সময় তিনি ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আঙ্কারার জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

এদিকে জাপোরিঝিয়া সঙ্কটের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং এর আশেপাশের পরিস্থিতি নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই প্ল্যান্টের নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে, এমন যে কোনো কাজ এড়িয়ে যেতে হবে। কোনো সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে এটি ব্যবহার করা উচিত হবে না। পাশাপাশি প্ল্যান্ট থেকে সমস্ত সামরিক সরঞ্জাম ও কর্মীদের প্রত্যাহারের সাথে সাথে এলাকাটিকেও নিরস্ত্রীকরণ করা দরকার।

তার ভাষায়, আমাদের অবশ্যই বলতে হবে যে, জাপোরিঝিয়ার যে কোনো ধরনের ক্ষতি হবে আত্মঘাতী।

ইস্তাম্বুল চুক্তির প্রশংসা করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ইউক্রেনের খাদ্য পণ্য এবং রাশিয়ান খাদ্য ও সারের বিশ্বব্যাপী প্রবেশাধিকার নিশ্চিত না করা পর্যন্ত বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের কোনো সমাধান নেই। বর্তমানে পণ্যের বাজারকে আরো শান্ত করতে এবং দাম কমানোর জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে বেশি পরিমাণে খাদ্য ও সার পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যুদ্ধের কারণে আটকে থাকা শস্য রপ্তানির জন্য তিনটি ইউক্রেনীয় বন্দর পুনরায় চালু করতে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গত ২২ জুলাই ইস্তাম্বুলে এক চুক্তিতে সই করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এরদোয়ান বলেন, ইস্তাম্বুল চুক্তির মাধ্যমে যে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা স্থায়ী শান্তিতে রূপান্তরের সম্ভাবনার ব্যাপারে আমরা চিন্তা-ভাবনা করেছি। কারণ পুরো বিশ্ব চুক্তিটির ইতিবাচক প্রভাব অনুভব করছে।

তিনি বলেন, গত ১ আগস্ট প্রথম জাহাজটি ইউক্রেনের বন্দর ছেড়ে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত ২৫টি জাহাজের মাধ্যমে প্রায় সোয়া ছয় লাখ টন ইউক্রেনীয় শস্য বিশ্ববাজারে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান জানান, এ পর্যন্ত তুরস্ক ইউক্রেনীয় নাগরিকদের জন্য ৯৮ ট্রাক মানবিক সাহায্য পাঠিয়েছে। এখন পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে সোয়া তিন লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে আঙ্কারা।

আঙ্কারা ইউক্রেনীয় বন্ধুদের পাশে আছে উল্লেখ করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, তার দেশ কূটনৈতিকভাবে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে কাজ করছে। জেলেনস্কিকে তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেনের অবকাঠামো পুনর্গঠনে তুরস্ক প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।