আবারও ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা রাশিয়ার

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম জানিয়েছে, ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী একটি মূল পাইপলাইন চলতি মাসের শেষে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনে তিন দিনের জন্য বন্ধ থাকবে। ফলে সে সময় জ্বালানি সরবরাহও বন্ধ থাকবে। খবর আল জাজিরা।

গ্যাজপ্রম

বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে জার্মানিতে চলে যাওয়া নর্ড স্ট্রীম ১ পাইপলাইনের অনির্ধারিত রক্ষণাবেক্ষণের কথা জানিয়েছে গ্যাজপ্রম। মস্কো ও ব্রাসেলসের মধ্যকার বিরোধের জন্য এরই মধ্যে এ পাইপলাইনে গ্যাসের সরবরাহ প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে ইউরোপসহ পুরো অঞ্চলজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সেই সাথে মন্দার ঝুঁকিও বেড়েছে অনেকখানি।

গতকাল শুক্রবার অনলাইনে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে গ্যাজপ্রম জানায়, রাশিযা ও জার্মানির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা পাইপলাইনটির মূল কম্প্রেসার স্টেশনে থাকা একমাত্র কর্মক্ষম টারবাইনটিতে তিনদিনের জন্য রুটিন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলবে। জার্মান অংশীদার সিমেন্স এনার্জির সাথে যৌথভাবে এ কাজ চলবে। ফলে ৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।

নর্ড স্ট্রিম ১

ইউরোপের দেশ জার্মানি রাশিয়ার গ্যাসের ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল ছিল। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে জার্মানি রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ধীরে ধীরে রাশিয়ার তেল-গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। এ অবস্থায় রাশিয়া নানা কারণ দেখিয়ে নিজেরাই জ্বালানি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।

নর্ড স্ট্রিম ১ লাইনে গত মাসেও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছে রাশিয়া। সে সময়ও সরবরাহ বেশ কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়। ইউরোপ আশঙ্কা করছিল, হয়তো রাশিয়া আর তেল-গ্যাস রপ্তানি করবে না। সে আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে আবারো জ্বালানি সরবরাহ শুরু হয়। তবে জ্বালানি সরবরাহের পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। রাশিয়া অবশ্য এ হ্রাসের জন্য প্রযুক্তিগত সমস্যাকে দায়ী করেছে। কিন্তু জার্মানি বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে।

জ্বালানি সরবরাহের পাইপলাইন মেরামতের ঘোষণায় জার্মানিতে আবারও ভয় ফিরে এসেছে। নানা আশঙ্কার কারণে জার্মানি এই শীতের আগেই জ্বালানি মজুদের চিন্তা ভাবনা করছিল। তবে গ্যাজপ্রম যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে এর উল্টো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

রাশিয়া এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক ডজন দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রবাহ কমিয়েছে বা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইউরোপজুড়ে গ্যাসের দাম অনেকখানি বেড়ে গেছে। সেখানকার মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলেছে। এমনকি পুরো ইউরোপ মন্দায় ডুবে যেতে পারে, এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

গ্যাজপ্রম জানিয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ হলে নর্ড স্ট্রিম ১ এর মাধ্যমে গ্যাসের প্রবাহ দৈনিক ৩৩ মিলিয়ন ঘনমিটারে পৌঁছবে। বর্তমান পরিমাণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও মূলত এটি পাইপলাইনের সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ।