উপর্যুপরি মৌজ-মাস্তিতে তোপের মুখে ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী

বন্ধুদের সঙ্গে কয়েকদিনের উপর্যুপরি পার্টি আর মৌজ-মাস্তিতে ব্যস্ত থাকার জেরে বড় ধরণের বিতর্কের মুখে পড়েছেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন। পার্টিতে মাদক গ্রহণের অভিযোগ ওঠার পর ড্রাগ টেস্টে অংশ নিয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী এ রাজনীতিক। কিন্তু বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। পপ গায়ক ওলাভি উসিভিরতার সঙ্গে সানা মারিনের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে ফিনল্যান্ডের প্রচারমাধ্যমে।

রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যায় পড়তে পারেন সানা মারিন

ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে ওলাভি উসিভিরতা বলেছেন, বুকে হাত দিয়ে বলছি, প্রধানমন্ত্রী সানা মারিনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেবলই বন্ধুত্বের। আমাদের মধ্যে অনৈতিক কিছু ঘটেনি।

উসিভিরতা যা-ই বলুন, ফিনল্যান্ড ও বাইরের সোশ্যাল মিডিয়া ইউজাররা দেদারসে শেয়ার করছেন সানা মারিনের ঘাড়ে তার আবেগঘন চুম্বনের ভিডিও। ফিনল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমেও বারবার আলোচনা ও শেয়ার হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী মারিনের পার্টির বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ, যার মধ্যে উসিভিরতার সঙ্গে তার উদ্দাম নাচের ভিডিওটিও রয়েছে। আরও রয়েছে পার্টিতে অন্য দুজন পুরুষের কোলে সানা মারিনের বসে পড়ার ভিডিও।

বয়সে ও রাজনীতিতে কিছুটা নবীন হলেও সানা মারিন রয়েছেন ফিনল্যান্ড সরকারের শীর্ষপদে। এমন সময়ে তিনি দেশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন যখন ফিনল্যান্ড তার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন আনছে। সানা মারিনের নেতৃত্বে ফিনল্যান্ড যোগ দিতে যাচ্ছে ন্যাটো সামরিক জোটে, যা শুধু তার দেশ নয়, বদলে দেবে পুরো বাল্টিক অঞ্চলের সামরিক ও কূটনৈতিক সমীকরণ।

দেশের এমন গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরে কাণ্ডারির ভূমিকায় থাকা প্রধানমন্ত্রীর জীবনাচার ও পরিণত-মনষ্কতা নিয়ে স্বভাবতই তার পক্ষের ও বিপক্ষের মানুষদের মনোযোগের অন্ত নেই। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পার্টি ও নাচানাচির একের পর এক ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হতে থাকায় নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমও।

পাঁচদিন আগে প্রকাশ হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে তাকে কয়েকজন মেয়েবন্ধুর সঙ্গে নাচতে দেখা যায়। এ সময় তাদের একজন পুরুষ সঙ্গীকে কোকেন কোকেন বলতে শোনা যায়। ভিডিওটি প্রকাশের পর অভিযোগ ওঠে, সানা মারিন মাদক নিয়েছেন। ফিনল্যান্ডের একাধিক রাজনীতিক তার ড্রাগ টেস্টেরও দাবি তোলেন।

সানা মারিন বলেছেন, তিনি অফিস ছুটির পর নিজের ব্যক্তিগত সময়ে পার্টিতে অংশ নিয়েছেন। তিনি কোনো মাদক নেননি এবং সন্দেহ কাটাতে ড্রাগ টেস্টেও অংশ নিয়েছেন। কী ধরনের টেস্টে তিনি অংশ নিয়েছেন, সেটা জানাননি।

সংবাদ পোর্টাল সিসকা আজকের প্রধান প্রতিবেদনে সানা মারিনের ড্রাগ টেস্টের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কোন টেস্টে ও কতক্ষণ সময় অতিবাহিত হলে কারও দেহে কোনো মাদকের উপস্থিতি শনাক্ত করা দুরুহ হয়ে পড়ে, সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পৃথক এক প্রতিবেদনে গত দুই সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী কোথায় কাদের নিয়ে কোনদিন কতক্ষণ পর্যন্ত পার্টি করেছেন, তা আলোচনা করেছে সিসকা।

হেলসিংকির বিভিন্ন এলাকায় পার্টিগোয়্যার, স্থানীয় অধিবাসী এবং রেস্তোরাঁ ও বার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সিসকা যে প্রতিবেদন রচনা করেছে তাতে দেখা যায়, গত ৫-৬ আগস্ট ও ১২-১৪ আগস্ট- দুটি উইকএন্ডেই সন্ধ্যা থেকে ভোর অব্দি একের পর এক ক্লাব, পার্টি ও পানশালায় ঘুরে সময় কাটিয়েছেন ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী।

ফিনল্যান্ডের জনসমাজে শুরু হওয়া গুজব ও সংবাদমাধ্যমের এ ঔৎসুক্য কোথায় গিয়ে থামবে, বলা মুশকিল। সানা মারিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনে বিষয়গুলোর কী প্রভাব পড়বে, সেটাও চুড়ান্তভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে আপাতত ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী যে বিতর্ক ও ব্যাকফুটে পড়েছেন, এটা স্পষ্ট।