যে কোনো মুহূর্তে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধ

ইউক্রেন যুদ্ধ যে কোনো মুহূর্তে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। জাপরোঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা হলে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা জানিয়ে আজ রাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছে রাশিয়া। পারমাণবিক, রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র মোকাবেলায় নাগরিকদের জন্য বিশেষ সতর্কতাবিধি জারি করেছে ইউক্রেন। মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ইউক্রেন ছাড়তে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

জাপরোঝঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র

ইউক্রেনে বড় ধরণের হামলার প্রস্তুতি হিসেবে সীমান্তের কাছে ৪৩০টি জঙ্গিবিমান ও ৩৬০টি সামরিক হেলিকপ্টার জড়ো করেছে রাশিয়া। নিকোলায়েভসহ বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার স্থল বাহিনীর হামলার গতিও বেড়েছে। যুদ্ধকে ঘিরে শঙ্কা বাড়িয়েছে রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, ইউক্রেনের বেসামরিক স্থাপনা ও সরকারি ভবনে রাশিয়া হামলা জোরদার করবে, এ মর্মে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য এসেছে। ঘরে-বাইরে কখন কোথায় বিস্ফোরণের আওয়াজ পেলে কী করতে হবে, সে সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তর মার্কিনীদের অবিলম্বে ইউক্রেন ছাড়তে বলেছে।

সম্ভাব্য রাসায়নিক ও পারমাণবিক বিপর্যয় মোকাবেলায় নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন ধরণের সতর্ক সংকেত প্রবর্তন করেছে ইউক্রেন। দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিফেন্স কাউন্সিল রেডিও, টিভি ও ইন্টারনেটে এসব সংকেতের অডিও-ভিজুয়াল ফাইল শেয়ার করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছে এবং যে কোনো সংকেত পেলে পরবর্তী নির্দেশনা জানতে স্থানীয় রেডিও অথবা টিভি চালু করতে বলেছে।

নির্দেশনায় বলা হয়, স্থানীয় গির্জা ও অন্যান্য সরকারি-প্রতিষ্ঠানিক সাউন্ড সিস্টেম থেকে চার্চ বেলের আওয়াজ পেলে রাসায়সিক বিপর্যয় ঘটেছে বলে ধরে নিতে হবে। সাউন্ড সিস্টেম থেকে অ্যালার্ম বেল বাজানো হলে তেজষ্ক্রিয় বিচ্ছুরণ ও বিপদ ঘটেছে বলে জানতে হবে। আর ট্রেনের হুইসেলের মতো দীর্ঘ সংকেত বাজানো হলে অবিলম্বে শহর ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

ইউক্রেনের লভিভ নগরীর মেয়র আন্দ্রেই সাদোভয় বলেছেন, লভিভ শহর পারমাণবিক ও রাসায়নিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্য প্রতিদিন নাগরিক ও কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে শনিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জাপরোঝঝিয়ায় রাসায়নিক হামলার অভিযোগ আনে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে। ওইদিন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৩১ জুলাই ইউক্রেনীয় বাহিনী জাপরোঝঝিয়ায় রকেট হামলা চালায়। এ ঘটনার পর সেখানে দায়িত্ব পালনরত রুশ সৈন্যদের দেহে গুরুতর বিষক্রিয়া দেখা দেয়। বিস্তারিত পরীক্ষার পর তাদের দেহে টাইপ বি বোটুলিনাম টক্সিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

ইউক্রেন পরিস্থিতি আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার জরুরি অধিবেশন ডেকেছে রাশিয়ার স্টেট দুমা। ওইদিন জাপরোঝঝিয়া ইস্যুতে রুশ পার্লামেন্ট বিশেষ বিবৃতি প্রকাশ করবে বলে খবরে জানানো হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক পার্লামেন্টারি কমিটির সভাপতি টোবিয়াস এলউড জাপরোঝঝিয়ায় রাশিয়ার দিক থেকে হামলা হতে পারে- এমন ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইচ্ছাকৃত হামলার ঘটনা ঘটলে ন্যাটো সংবিধির ৫ ধারা কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে ন্যাটো সংঘাতে জড়াতে পারে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, ন্যাটো যদি রেড লাইন অতিক্রম করে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ায়, তাহলে পুরো পৃথিবীর জন্য মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। যে কোনো মূহূর্তে সংঘাত পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে, যার পরিণতি হবে খুব খারাপ।