দৈনিক কোটি ডলারের গ্যাস পুড়িয়ে ফেলছে রাশিয়া!

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে দুর্বল করার অভিপ্রায়ে দেশটির ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যে নিষেধাজ্ঞার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দেশটির জ্বালানি খাতে। উত্তোলিত গ্যাস বিক্রি করতে না পারায় একদিকে যেমন ক্রেতা দেশগুলো বিপাকে পড়ছে, তেমনি রাশিয়াও বাধ্য হয়ে সে গ্যাস পুড়িয়ে ফেলছে। আর এতে তৈরি হচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস কার্বন। খবর বিবিসি।

স্যাটেলাইট থেকে তোলা গ্যাসফিল্ডের আগুন জ্বলার দৃশ্য

স্যাটেলাইট থেকে তোলা একটি ছবিতে দেখা গেছে, রাশিয়া ফিনল্যান্ড সীমান্তের কাছে একটি গ্যাস স্থাপনায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়িয়ে ফেলছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় এক কোটি ডলার বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ গ্যাস স্থাপনাটির অবস্থান সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তর-পশ্চিমে।

জানা গেছে, এই গ্যাস এর আগে নর্ডস্ট্রিম-১ পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে রপ্তানি করা হতো। তবে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে রাশিয়া এই পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। জার্মানির দাবি, চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণেই রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। তবে মস্কো বলছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। তবে কারণ যা-ই হোক, এর জের ধরে ইউরোপ জুড়ে জ্বালানির মূল্য নজিরবিহীন হারে বেড়ে গেছে।

২৩ মাইল দূরে থেকেও দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার গ্যাসফিল্ডের আগুন

বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তোলিত গ্যাস বিক্রি করতে না পারায় পোর্তোভায়ার ওই এলএনজি স্থাপনায় প্রতিদিন ৪০ লাখ ঘনমিটারেরও বেশি গ্যাস পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। যে কোনো গ্যাসফিল্ডে গ্যাস পোড়ানো একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। সাধারণত কারিগরি ও নিরাপত্তাজনিত কারণেই তা করা হয়ে থাকে। কিন্তু রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এ গ্যাসফিল্ডের এ আগুনের পরিমাণটা অস্বাভাবিক। এতে আগুনের পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি পুরো এলাকার তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে।

ফিনল্যান্ডের কিছু নাগরিক এ বিষয়টি প্রথমে খেয়াল করেন। তারা সে সময় মনে করেছিলেন, হয়তো সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কয়েকদিন পরও তারা একই পরিস্থিতি দেখে তারা ধারণা করেন, ইচ্ছে করে বিপুল পরিমাণ গ্যাস পুড়িয়ে ফেলায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নরওয়েভিত্তিক জ্বালানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিস্টাড এনার্জির তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার গ্যাস পোড়াচ্ছে রাশিয়া।

ব্রিটেনে জার্মান রাষ্ট্রদূত মিগুয়েল বের্গার মন্তব্য করেন, নিজেদের নিষেধাজ্ঞার জেরে ইউরোপ গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর যে চেষ্টা করছে, তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে রুশ অর্থনীতির ওপর। ইউরোপের মতো বড় ক্রেতা না থাকায় তাদেরকে এই গ্যাস পুড়িয়ে ফেলতে হচ্ছে।

গ্যাস বিষয়ক কোম্পানি ক্যাপটেরিওর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক ড্যাভিস বলেছেন, পরিচালনাকারীরা সহজেই কোনো স্থাপনা বন্ধ করে দিতে চান না। কারণ একবার বন্ধ করে তা পুনরায় চালু করা কারিগরি দিক থেকে বেশ কঠিন কিংবা ব্যয়বহুল হতে পারে। তার চেয়ে বরং উৎপাদিত গ্যাস পুড়িয়ে ফেলাই যুক্তিসঙ্গত মনে করছে রাশিয়া। তবে এ বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিদিন এত গ্যাস পোড়ানোর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশকেও এর চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। তারা বলছেন, এতে প্রচুর কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ধোঁয়া তৈরি হচ্ছে। এতে মেরু অঞ্চলের বরফ গলা বেড়ে যেতে পারে।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, আগে থেকেই বিশ্বে গ্যাস পোড়ানোতে বিশ্বের শীর্ষে অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। এই গ্যাস পোড়ানো থেকে বিশ্বে প্রতিদিন ৯ হাজার টন কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়ছে তারা। এখন নিশ্চিতভাবেই সে পরিমাণটা আরোও অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।