ইরাকে সংঘর্ষে নিহত ১৫, মুক্তাদা সদরের অনশন

ইরাকে অভ্যন্তরীণ সহিংসতা মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় দেশটির প্রভাবশালী শিয়া ধর্মগুরু এবং সাদরিস্ট আন্দোলনের প্রধান মুক্তাদা আল-সদর সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ সহিংসতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি অনশন ধর্মঘট পালন করবেন। সংবাদটি দিয়েছে ইরাকের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইএনএ।

মুক্তাদা আল সদর

সাদরিস্ট ব্লকের প্রধান হাসান আল-আথারির একটি টুইটের বরাত দিয়ে গতকাল সোমবার রাতে আইএনএ জানায়, সহিংসতা ও অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তাদা সদর।

গতকাল সোমবার মুক্তাদা আল-সদর ঘোষণা করেন, সবার ভালোর জন্য তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। এ ঘোষণার পর তার শত শত বিক্ষুব্ধ অনুসারী সরকারি প্রাসাদে তীব্র হামলা চালায় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ শুরু করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপন করা ব্লক সরিয়ে ফেলছে বিক্ষোভকারীরা

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, মুক্তাদা সদরের অনুগত বিক্ষোভকারীরা দড়ি দিয়ে সরকারি প্রাসাদের বাইরের সিমেন্টের বাধা টেনে নামিয়ে দেয় এবং প্রাসাদের গেট ভেঙ্গে ফেলে। হামলার শিকার সরকারি প্রাসাদটি সুরক্ষিত গ্রিন জোনে অবস্থিত। সেখানে বেশ কিছু সরকারি সংস্থা এবং কয়েকটি বিদেশি কূটনৈতিক মিশন রয়েছে।

রাত নামার সাথে সাথে মুক্তাদা সদরের অনুসারী একটি সশস্ত্র সংগঠন সারায়া সালাম পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। স্পেশাল ফোর্স ডিভিশন এবং ইরাকি আর্মির নবম ডিভিশনের একটি ছোট বাহিনীও তাদের মোকাবেলা করতে থাকে। কয়েক ঘণ্টা ধরে এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় গ্রিন জোনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিশেষ বাহিনী বিভাগের অন্তত একজন সৈনিক নিহত হয়েছেন। মেশিনগানের গোলাগুলির আওয়াজ পুরো বাগদাদে প্রতিধ্বনিত হয়। বেশ কয়েক রাউন্ড মর্টারের শব্দও শোনা গেছে।

এ অবস্থায় ইরাকি কর্তৃপক্ষ সহিংসতা মোকাবেলায় দেশব্যাপী কারফিউ ঘোষণা করেছে এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রিসভার অধিবেশন স্থগিত করেছেন।

গত বছরের ১০ অক্টোবর নির্বাচন হলেও এখন পর্যন্ত দেশটি নতুন সরকার গঠন করতে পারেনি। নির্বাচনে মুক্তাদা সদরের দল সবচেয়ে বেশি আসন জিতলেও তা সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। এর ওপর সমমনা দলগুলোর সাথে আলোচনায় অস্বীকৃতি এবং পরবর্তী সময়ে আলোচনা থেকে মুক্তাদা সদরের প্রস্থান দেশটিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

ইরাকের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসংখ্যা শিয়া ও সুন্নি এই দুই দলে বিভক্ত। মার্কিন হামলায় সাদ্দাম হোসেন নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে শিয়ারা চাপে ছিল। তবে এখন ক্ষমতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদকে কেন্দ্র করে শিয়ারা নিজেদের মধ্যেই লড়াই করছে।