ইসরায়েলি আদালতে ওয়ার্ল্ড ভিশন কর্মকর্তার ১২ বছরের সাজা

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের একজন কর্মকর্তাকে ১২ বছরের সাজা দিয়েছেন ইসরায়েলের একটি আদালত। বহুল আলোচিত এ মামলায় স্বতন্ত্র নিরীক্ষক ও তদন্তকারীরা কোনো অনিয়ম খুঁজে না পেলেও ইসরায়েলি আদালত ওই কর্মকর্তাকে সন্ত্রাসবাদের কয়েকটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে।

ওয়ার্ল্ড ভিশনের গাজা অফিসের সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হালাবিকে ১২ বছরের সাজা দিয়েছে ইসরায়েল

২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে গাজা উপত্যকার ইরেজ চেকপয়েন্ট থেকে ওয়ার্ল্ড ভিশনের গাজা অফিসের প্রধান মোহাম্মদ আল-হালাবিকে অপহরণ করে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী। গাজায় জরুরি ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার খবরে আন্তর্জাতিক এনজিও ও সাহায্য সংস্থাগুলো গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে।

মোহাম্মদ আল-হালাবিকে বেশ কিছুদিন অজ্ঞাতস্থানে গুম করে রাখার পর একপর্যায়ে ইসরায়েলিরা তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মর্মে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। ওয়ার্ল্ড ভিশনের গাজা অফিসের প্রধান সংস্থাটির তহবিল থেকে হামাসকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধপ্রস্তুতির জন্য অর্থ জোগান দেন বলে অভিযোগ আনে দখলদার কর্তৃপক্ষ।

আল-হালাবিকে গুম ও গ্রেপ্তারের কয়েক মাসের মাথায় ইসরায়েলিরা তার বিরুদ্ধে ওয়ার্ল্ড ভিশনের তহবিল থেকে সাত বছরে ৫ কোটি ডলার হামাসের কাছে স্থানান্তরের অভিযোগ আনে। আল-হালাবি নিজে এবং ওয়ার্ল্ড ভিশনের পক্ষ থেকেও কোনোরকম অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।

ওয়ার্ল্ড ভিশনের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার পাশাপাশি স্বতন্ত্র নিরীক্ষকদের উপর্যুপরি অনুসন্ধান ও তদন্তে এ অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। গাজা উপত্যকায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে একক বৃহত্তম তহবিল জোগানদাতা অস্ট্রেলিয়া সরকার তদন্ত করেও কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি। তারপরও ছয় বছরের বেশি সময় ধরে আটকে রেখে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ, মানসিক ও শারীরিক হয়রানির পর অবশেষে ইসরায়েল তাকে দোষী সাব্যস্ত করলো।

আল-হালাবির গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক ও জরুরি সাহায্য নিয়ে কর্মরত স্থানীয় ও বিদেশী এনজিওগুলোকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের যে প্রক্রিয়া ইসরায়েল শুরু করে, তাতে তারা অনেকটুকু সফল হয়েছে। ইসরায়েলি পীড়ন ও হয়রানির আশঙ্কায় বহু সংস্থা ফিলিস্তিনিদের জন্য নিজেদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। যে সব সংস্থা এখনও সক্রিয় রয়েছে, সেগুলোর কার্যক্রম ইসরায়েল জোরপূর্বক বন্ধ করছে। চলতি মাসেও ছয়টি এনজিওর অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছে দখলদার কর্তৃপক্ষ।

ইসরায়েলি আদালতের প্রহসনমূলক রায়ের পর আল-হালাবির আইনজীবী মাহের হান্না বলেন, এটা কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। পুরো প্রক্রিয়াতে এটাই বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, অবিচার জারি থাকবে। এ রায় ও সাজার বিরুদ্ধে আল-হালাবি ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবেন বলে তিনি জানান।

আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় ওয়ার্ল্ড ভিশন বলেছে, গ্রেপ্তার, ছয় বছর ধরে চলা বিচার প্রক্রিয়া, অন্যায় রায় ও সাজা প্রদান- সবকিছু ওই ব্যবস্থার প্রতিফলন দেখাচ্ছে যা গাজা ও পশ্চিম তীরে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত করে থাকে। ওয়ার্ল্ড ভিশন এবং ফিলিস্তিনিদের সহায়তারত অন্যান্য সাহায্য ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে শীতল প্রভাব ফেলবে এ রায়।