পুতিন: মার্কিন মোড়লিপনা টেকাতে ইউরোপের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া হচ্ছে

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পৃথিবীতে মার্কিন মোড়লিপনা ও একনায়কত্ব টিকিয়ে রাখতে ইউরোপের মানুষের স্বার্থ, তাদের জীবনমান জলাঞ্জলি দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপের কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা কমছে, কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষায় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ইউরোপের নেতারা। নিজ দেশের জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও ডলার রিজার্ভ কমাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পুতিন

পুতিন আজ সকালে ভ্লাদিভস্তক শহরে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামে বক্তব্য রাখছিলেন। এ সময় তিনি রাশিয়ার অর্থনীতি, বৈশ্বিক বাণিজ্যের হালচাল, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সম্পর্ক, রূপান্তরমান বিনিময় ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর অবরোধ আরোপের অসুখ সারাবিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। তারা চেষ্টা করছে এমন এক বিশ্বব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে, যেটা শুধু তাদেরই জন্য লাভজনক। এই অবরোধ আরোপের নীতির পেছনে বড় অনুঘটক হলো মার্কিন আধিপত্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর ভূমিকা ও প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ডলার, ইউরো ও পাউন্ডে আস্থা হারিয়েছে মানুষ। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি রাশিয়া ও চীনের মধ্যে জ্বালানির মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ইউরো, ডলার বাদ দিয়ে সমানুপাতিক হারে রুবল ও ইউয়ান ব্যবহার করবো। অন্যান্য পন্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রেও একইভাবে লেনদেন নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোনো পদক্ষেপ নিতে পিছপা হয় না। এটা করতে গিয়ে তারা নিজেরাই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তিকে দুর্বল করেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররাও ডলার রিজার্ভ কমিয়ে আনতে শুরু করেছে।

বাণিজ্য-অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, উন্নয়ন-উদ্ভাবনে রাশিয়ার অবস্থান ও অগ্রগতি বিশ্বকে জানান দিতে প্রতি বছর ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরাম আয়োজন করা হয়। রসকংগ্রেস ফাউন্ডেশনের আয়োজনের ভ্লাদিভস্তকের ফার ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের সপ্তম আসর।

ফোরামের প্লেনারি সেশনে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, রাশিয়া একটি সার্বভৌম দেশ। আমরা সবসময় নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করব। নিজস্ব খনি থেকেই সব ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজন মেটানোর সামর্থ্য রাশিয়ার রয়েছে। রাশিয়ার অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল। বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো হোঁচট খেয়েছে। কোম্পানিগুলো যদি চায়, রুশ সরকার তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি ক্রমশ কমছে। চলতি বছর মূল্যস্ফীতির হার হবে প্রায় ১২ শতাংশ। অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। আমরা পশ্চিমা অর্থনৈতিক আগ্রাসন মোকাবেলায় সফল হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ইউরোপের অর্থনীতির ধসের পেছনে একটি কারণ হলো রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। এখন তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট ও অস্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে একঘরে করা সম্ভব নয়। আমরা রাশিয়ার শিল্প ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জোরদারের কাজ অব্যাহত রাখবো।

পুতিন বলেন, দরিদ্র দেশগুলোর চাহিদা মেটাতে ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানির কথা বলা হয়েছিল। অথচ এ পর্যন্ত ইউক্রেনের বন্দর ছেড়ে যাওয়া খাদ্যবোঝাই ৮৭টি জাহাজের মধ্যে মাত্র দুটি সংকটকবলিত আফ্রিকার দিকে গেছে। বাকি সব খাদ্য ইউরোপে নিয়ে মজুত করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপন্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ট্র্যাজেডির ঝুঁকি তৈরি করছে। আমি বিষয়টি নিয়ে (তুর্কি প্রেসিডেন্ট) এরদোয়ানের সঙ্গে অবশ্যই কথা বলব।