ভারতে লাম্পি রোগে ৫৭ হাজার গবাদি পশুর মৃত্যু

ভারতে ‘লুম্পি স্কিন ডিজিজ’-এ আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৫৭ হাজার গবাদি পশু মারা গেছে। দেশটির ৬-৭টি রাজ্যে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজস্থান। আক্রান্ত রাজ্যগুলোতে এই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য টিকাকরণ কার্যক্রম বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধ পালন মন্ত্রী পরশোত্তম রুপালা এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর দ্য হিন্দু।

ভারতের একটি ফার্মে পালিত গরু

ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) এক ধরনের চর্মরোগ হলেও এতে গরুর মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। সাধারণত বর্ষার শেষে মশা-মাছির বংশবিস্তারের সময় রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে আক্রান্ত গরু-বাছুর প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং একপর্যায়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। জ্বরের সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে লালা বের হয় এবং পা ফুলে যায়। আক্রান্ত গরুর শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়। এই ক্ষত শরীরের অন্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়ে।

এ রোগের প্রধান উপসর্গগুলো হচ্ছে, জ্বর, চোখ ও নাক থেকে স্রাব, মুখ থেকে লালা নিঃসরণ, সারা শরীরে নোডিউলের মতো নরম ফোসকা, দুধ উৎপাদন কমে যাওয়া এবং খেতে অসুবিধা হওয়া ইত্যাদি। এ রোগে আক্রান্ত হলে গরু ঝিম মেরে থাকতে শুরু করে ও কাঁপতে শুরু করে। এলএসডির কারণে কিডনির ওপর প্রভাব পড়ায় গরু মারাও যায়। এই রোগটি মশা, মাছি, উকুন এবং গবাদি পশুর সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এবং দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়।

লাম্পি রোগে আক্রান্ত গরু

পরশোত্তম রুপালা বলেন, ভারতের গুজরাট, রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশসহ ৬-৭ টি রাজ্যে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। রাজস্থানে এই রোগটি ব্যাপকাকারে ছড়িয়ে পড়লেও গুজরাটের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে মন্ত্রী দাবি করেন, এখন পর্যন্ত দুধ উৎপাদনে কোনো প্রভাব পড়েনি।

রুপালা বলেন, টিকা প্রয়োগ এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রোটোকল অনুসরণ করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া তিনি রাজ্যগুলোকেও মৃত গবাদি পশু কবর দেওয়ার প্রটোকল অনুসরণ করতে বলেছেন।

পশুপালন ও দুগ্ধজাত বিভাগের সচিব যতীন্দ্র নাথ সোয়াইন বলেছেন, এখন পর্যন্ত ভারতজুড়ে ৫৭ হাজার গবাদি পশু মারা গেছে এবং এর মধ্যে প্রায় ৩৭ হাজারই মারা গেছে রাজস্থানে।

মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে প্রাদুর্ভাবের পর সম্প্রতি এশিয়ায় এলএসডি ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে লাম্পি রোগটি দেখা দেয়। একই বছর ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় কিছু কিছু স্থানে এ রোগ দেখা গিয়েছিল। এ বছর ভারতের পশ্চিম ও উত্তর রাজ্যের পাশাপাশি আন্দামান নিকোবরেও এই রোগের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে।

ভারতের ১৯তম প্রাণিসম্পদ শুমারির তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের বৃহত্তম দুধ উৎপাদনকারী দেশটিতে ২০১৯ সালে গবাদি পশুর সংখ্যা ছিল ১৯ কোটি ২৫ লাখ। ভারতের কৃষি-গবেষণা সংস্থা আইসিএআরের দুটি ইনস্টিটিউট সম্প্রতি গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজের জন্য একটি দেশীয় ভ্যাকসিন তৈরি করেছে, যা বেশ কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। দেশটির সরকার অতি দ্রুত এই ভ্যাকসিন পুরো দেশে প্রয়োগের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে।