নারী অধিকার ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান আফগানিস্তানের

ইসলামি আমিরাত আফগানিস্তানে নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে- জাতিসংঘ থেকে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তালেবান প্রশাসন। জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি থেকে একজন নারীকেও বরখাস্ত করা হয়নি। বরং তাদেরকে অনেককে ঘরে বসিয়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে। খবর জিও নিউজ।

কোনো নারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়নি দাবি তালেবান প্রশাসনের

আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি রিচার্ড বেনেট বর্তমান তালেবান শাসনামলে নারীদের প্রতি একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তালেবান কর্তৃপক্ষ এ জবাব দেয়। বেনেট তার প্রতিবেদনে বলেছিলেন, আগস্টে তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে নারী অধিকারে বিস্ময়কর অবনতি হয়েছে। বিশ্বে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে নারীরা লিঙ্গবৈষম্যের কারণে তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে এত দ্রুত বঞ্চিত হয়েছে।

আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ গতকাল মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বলেন, আফগানিস্তানের মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি পক্ষপাতমূলক এবং বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, ইসলামিক আমিরাতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে।

আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনার আলাদা ব্যবস্থা

জাতিসংঘকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সংস্থাটির উচিত সারা বিশ্বের মানুষের মতামত ও বিশ্বাসকে সম্মান করা। সব সময় নির্দিষ্ট কিছু দেশের মতানুযায়ী অবস্থান নেওয়া উচিত নয়। এ ধরনের কাজ বৈশ্বিক এই সংস্থার সুনামকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং এটি স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোকে কয়েকটি দেশের লেন্সের মাধ্যমে দেখে।

জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানে এখন নারীর জীবনের জন্য কোনো হুমকি নেই। এখন কোনো আফগান নারী হত্যার শিকার হয় না, আত্মীয়দের হারায় না। কেউ আফগান নারীদের অসম্মান করে না। কোনো নিরপরাধ নারী কারাগারে নেই এবং দেশের ১৮১টি পাবলিক ও প্রাাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পুরুষের পাশাপাশি নারীর জন্যও উন্মুক্ত।

নারীর চাকরির ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করেন, হাজার হাজার আফগান নারী শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, পুলিশ, মিডিয়া, ব্যাংক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কাজ করছেন। প্রতিকূল পরিবেশের কারণে যেসব স্থানে নারীরা এখনও কাজে উপস্থিত হতে পারছেন না, তাদেরও নিয়মিত বেতন দেওয়া হয়। তারা সপ্তাহে শুধু একদিন এসে তাদের উপস্থিতির স্বাক্ষর করে যান এবং বাড়িতে বসিয়েই তাদের বেতন দেওয়া হয়।

আফগান সরকারের মুখপাত্র আরো বলেন, আফগানরা এখন শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে এবং তারা এখন যুদ্ধ, নিরাপত্তাহীনতা, হত্যা ও ঝামেলা থেকে অনেক দূরে। আফগান সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক রিজার্ভ হিমায়িত করায় তারা দেশ পরিচালনায় বিপাকে পড়েছেন। তারপরও সরকারি সব সংস্থা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে।

তিনি আরও বলেন, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর হাজার হাজার লোককে ক্ষমা দেওয়া হয়েছিল, যারা ২০ বছর ধরে দেশবাসীর বিরুদ্ধে এবং বিদেশি হানাদারদের সমর্থনে বন্দুক তুলেছে, আফগানদের হত্যা করেছে।

জাবিহুল্লাহ বলেন, জাতিসংঘের পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদনে তালেবানের কোনো অর্জনই হাইলাইট বা প্রশংসিত হয়নি।