ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে অপমান করে ফিরিয়ে দিলেন চিলির প্রেসিডেন্ট

চিলির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে অপমানজনকভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দখলদার বাহিনীর গুলিতে এক ফিলিস্তিনি কিশোর হত্যার খবর পেয়ে চিলির বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বরিচ সান্তিয়াগোতে নিযুক্ত নতুন ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানালে রাষ্ট্রদূত গিল আরতজিয়েলি ফিরে যেতে বাধ্য হন। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

ফিলিস্তিনি কিশোরী আহেদ তামিমি (মাঝে) ও তার বোনের সঙ্গে সে সময়কার ছাত্রনেতা গ্যাব্রিয়েল বরিচ

সান্তিয়াগোতে নিযুক্ত নতুন ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গিল আরতজিয়েলি গতকাল প্রথামাফিক পরিচয়পত্র উপস্থাপনের জন্য প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন লা মোনেদা প্যালেসে যান। চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আরতজিয়েলি সেখানে পৌঁছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বরিচ ফন্ত এ সময় ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে সময় দিতে অস্বীকৃতি জানান।

চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র স্থানীয় সংবাদ পোর্টাল এক্স-আন্তেকে বলেছে, ‘প্রেসিডেন্ট বরিচ ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কারণ গাজা উপত্যকায় এক কিশোরের মৃত্যুর কারণে আজ ছিল খুব স্পর্শকাতর একটি দিন।’

গ্যাব্রিয়েল বরিচ

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সময় অনুযায়ী রাষ্ট্রদূত গিল আরতজিয়েলি লা মোনেদা প্যালেসে পৌঁছেন। প্রেসিডেন্ট বরিচ যখন সময় দিতে অস্বীকৃতি জানান, রাষ্ট্রদূত তখন প্রেসিডেন্টের বাসভবনে অপেক্ষা করছিলেন। পরে চিলির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও উরেজোলা রাষ্ট্রদূতকে জানান যে তার পরিচয়পত্র আজ গ্রহণ করা হবে না এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার সাক্ষাতের কর্মসূচিটি অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলি কূটনীতিকরা জানান, যে কিশোরের হত্যার কথা উল্লেখ করে চিলি সরকার রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত কর্মসূচি বাতিল করেছে, গাজায় নয় পশ্চিম তীরে তার মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ওই কিশোর প্রাণ হারায়।

বৃহস্পতিবার সকালে প্রেসিডেন্টের সাক্ষাত না পেয়ে ফিরে যাওয়ার পর ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গিল আরতজিয়েলিকে বিকেলে চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও উরেজোলার সঙ্গে তার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়।

ঘটনার বিষয়ে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) সকালের ঘটনা আমার জন্য যথেষ্ট অস্বস্তির। তবে ইসরায়েলি ও ইহুদী হিসেবে আমরা চার হাজার বছর ধরে বহু অপমান সয়েছি। চিলির ও ইসরায়েলের ভালোর জন্য আজকের ঘটনা আমরা ভুলে যাবো।

গত ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার আগে থেকে বামপন্থী ছাত্রনেতা গ্যাব্রিয়েল বরিচ ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার অবস্থানের জন্য পরিচিতি পান। ইসরায়েলের বর্ণবাদী নীতির প্রতিবাদে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য ও পণ্য বয়কটের যে আন্তর্জাতিক আন্দোলন বিডিএস (বয়কট-ডাইভেস্ট-স্যাঙ্কশন) মুভমেন্ট নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে, তার একনিষ্ঠ সমর্থক চিলির এ তরুণ প্রেসিডেন্ট।

দক্ষিণ আমেরিকায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩ লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি অভিবাসী চিলিতে বসবাস করে। ২০১৫ সালে গ্যাব্রিয়েল বরিচ যখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ছাত্র বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন, তারও আগে থেকে ফিলিস্তিনি অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের সঙ্গে তার ওঠাবসা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এক ইসরায়েলি সৈন্যকে চড় মেরে সারাবিশ্বে আলোচিত হয়ে ওঠা ফিলিস্তিনি কিশোরী আহেদ তামিমি ও তার পরিবারের সঙ্গে সংহতি জানাতে বরিচ পশ্চিম তীরের নবী সালিহ গ্রামে সফর করেছিলেন।

চিলির ইহুদী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে রস হাসানাহ উৎসবের উপহার হিসেবে গ্যাব্রিয়েল বরিচের কাছে এক বয়াম জার পাঠানো হয়েছিল। তিনি ওই উপহার ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, আপনাদের সৌজন্যকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আপনারা যদি ইসরায়েল সরকারকে দখলদারি বন্ধ করতে বলতেন, তাহলে বেশি আনন্দিত হতাম।

কূটনৈতিক প্রথা অনুযায়ী যে কোনো দূতাবাসে নতুন নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে নিজের পরিচয়পত্র উপস্থাপন করে থাকেন। স্বাগতিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ওই পরিচয়পত্র গ্রহণের পর রাষ্ট্রদূতের নিয়োগ পূর্ণতা পায়। চিলির প্রেসিডেন্ট গিল আরতজিয়েলির পরিচয়পত্র গ্রহণ না করায় সান্তিয়াগোতে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের আনুষ্ঠানিক নিয়োগ কার্যতঃ অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে গেল।