ইসরায়েলকে হেজবুল্লাহর কঠোর হুঁশিয়ারি

ভূমধ্যসাগরে বিরোধপূর্ন কারিশ গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করে লেবাননের প্রধান রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠন হেজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, আমাদের চোখ কারিশ গ্যাসক্ষেত্রে তাক করে রেখেছি, আমাদের মিসাইলও কারিশ গ্যাসক্ষেত্রে তাক করে রেখেছি। ইসরায়েল সরকার কারিশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরুর আগমূহূর্তে হেজবুল্লাহ প্রধান এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন।

কারিশ গ্যাসক্ষেত্র

আজ শনিবার দুপুরে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে হেজবুল্লাহ মহাসচিব বলেন, লেবাননি প্রতিরোধ আন্দোলনের দৃষ্টি ও মিসাইল এ মূহূর্তে কারিশ গ্যাসক্ষেত্রের উপর নিবদ্ধ। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সবাই জানে যে আমরা ফাঁকা বুলি ছুঁড়ি না। আমাদের কথার যথার্থতার বহু প্রমাণ এরইমধ্যে তারা পেয়েছে।

ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে সমুদ্রসীমা নিয়ে চলমান বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে কারিশ গ্যাসক্ষেত্র। ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত ওই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে ইউরোপে রপ্তানির প্রস্তুতি হিসেবে ইসরায়েল সরকার জুন মাসে সেখানে দুটি তেল-উত্তোলনকারী জাহাজ মোতায়েন করে। লেবানন সরকার এতে প্রবল আপত্তি জানালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তেল আবিব ও বৈরুতের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়।

হেজবুল্লাহর চোখ ও মিসাইল দুটোই কারিশ গ্যাসক্ষেত্রে তাক করা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাসান নাসরাল্লাহ

এর আগে হেজবুল্লাহর পক্ষ থেকে লেবানন সরকারকে কারিশ গ্যাসক্ষেত্রে লেবাননের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা এবং বিরোধপূর্ণ জলসীমায় ইসরায়েলের খনন কাজ বন্ধের জন্য মধ্য-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সময়সীমা শেষ হবার পর আজ টেলিভিশনে লেবাননের জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন হেজবুল্লাহ মহাসচিব।

হাসান নাসরাল্লাহ বলেন, বিগত সপ্তাহগুলোতে আমরা চুপচাপ ছিলাম যাতে আলোচনা নিজের গতিতে এগোনোর সুযোগ পায়। এ সময়ে আমরা দৃশ্যপটের আড়ালে ইসরায়েলকেও সতর্ক করে বার্তা পাঠিয়েছি।

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণ দেওয়ার আগে আজ সকালে হেজবুল্লাহ মহাসচিব লেবাননের সংখ্যালঘু দ্রুজ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের নেতা তালাল আর্সলানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় উভয় দলের নেতারা লেবাননে চলমান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সংকটসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করেন বলে আল-মায়েদীন টিভি জানিয়েছে।

এর আগে গতকাল শুক্রবার ইসরায়েল সরকার জানায়, ইসরায়েলের জ্বালানি মন্ত্রণালয় শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে লন্ডনভিত্তিক হাইড্রোকার্বন কোম্পানি এনার্জিএনকে কারিশ গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের লাইসেন্স হস্তান্তর করেছে। লন্ডন ও তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত কোম্পানিটি গ্যাস উত্তোলনের পাশাপাশি কারিশ গ্যাসক্ষেত্রকে ইসরায়েলের গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

ইসরায়েলের জ্বালানি মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, কারিশ থেকে গ্যাস উত্তোলনের পথে প্রথম ধাপ হলো গ্যাসক্ষেত্রটিকে ইসরায়েলের পাইপলাইন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা। চুক্তি অনুযায়ী, ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কারিশ থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করবে এনার্জিএন।

হেজবুল্লাহ মহাসচিব বলেন, লেবানন যে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে সেখান থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো নিজেদের ভূখণ্ড ও জলসীমায় থাকা তেল ও গ্যাস উত্তোলন। লেবাননের প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।

ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে সমুদ্রসীমা নিয়ে এ বিরোধে মধ্যস্ততা করছেন ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত মার্কিন কূটনীতিক আমোস হচস্টাইন। আগামী দু’একদিনের মধ্যে তিনি লেবাননের কাছে একটি বিকল্প ও চুড়ান্ত প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন বলে তেল আবিবের সরকারি সূত্রের বরাতে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে।

গত মাসের শেষদিকে ইসরায়েল সরকারের পক্ষে আমোস হচস্টাইন লেবাননকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন কারিশ গ্যাসক্ষেত্রে ইসরায়েলকে পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে পার্শ্ববর্তী ক্বানা গ্যাসক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে কারিশ ও ক্বানা দুটি গ্যাসক্ষেত্র থেকেই এনার্জিএন কোম্পানি গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্ব নেবে বলে তিনি প্রস্তাব করেন। লেবানন সরকার ওই প্রস্তাব এক কথায় নাকচ করে দিয়েছে।

এদিকে কারিশ গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে হেজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ মেজর জেনারেল আভিভ কোচাভি গতকাল মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী প্রধান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাদের বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।