শাহবাজ শরীফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ, বিচারের প্রস্তাব

দুর্নীতির দায়ে সাত বছরের সাজা খাটা অবস্থায় চিকিৎসার কথা বলে আট সপ্তাহের জামিন নিয়ে দেশ ছেড়ে পালান নওয়াজ শরীফ। পলাতক এ আসামির সঙ্গে পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়ে পরামর্শ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। এজন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে শাহবাজের বিচারের প্রস্তাব পাশ করেছে পাঞ্জাব এসেম্বলি।

গতকাল নিউইয়র্কে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে শাহবাজ শরীফ ও তার মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য

পাঞ্জাবের পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী বাশারাত রাজা পাকিস্তানের সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদ (রাষ্ট্রদ্রোহিতা) অনুযায়ী শাহবাজ শরীফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এসেম্বলিতে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে প্রস্তাবটি পাশ হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী দেশের নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়ে কয়েকদিন আগে লন্ডনে একজন পলাতক আসামির সঙ্গে পরামর্শ করেন। এতে করে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার শপথ লঙ্ঘন করেছেন। এটা কেবল একজন অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তির সঙ্গে গোপনীয় তথ্য শেয়ার করার বিষয় নয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদাকেও উপহাস করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ চলতি সপ্তাহের শুরুতে ব্রিটেনের প্রয়াত রানী এলিজাবেথের শেষকৃত্যে যোগ দিতে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তিনি লন্ডনে বসবাসরত তার বড় ভাই নওয়াজ শরীফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয় আলোচনা করেন।

২০১৯ সালের নভেম্বরে চিকিৎসার প্রয়োজনে লাহোর হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জামিন পাবার পর থেকে নওয়াজ শরীফ লন্ডনে অবস্থান করছেন। এর আগে তিনি লাহোরের লোট লাখপাত জেলে আল-আজিজিয়া দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের সাজা খাটছিলেন।

পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার আগামী নভেম্বরে অবসর গ্রহণের কথা রয়েছে। শাহবাজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের (এন) নেতৃত্বাধীন জোট সরকার বলেছে, নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়ে তারা জোটভুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করবে।

গত শনিবার গুজরানওয়ালায় এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রী ও মুসলিম লীগ (এন) নেতা খুররম দস্তগীর খান বলেন, লন্ডনে নওয়াজ শরীফের সঙ্গে পরামর্শের পর প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ ও অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

খুররম দস্তগীরের বক্তব্য ও লন্ডনে নওয়াজের সঙ্গে শাহবাজের সাক্ষাতের ছবি প্রকাশের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে শাহবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলে। সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়ে পলাতক আসামির সঙ্গে পরামর্শ করায় শাহবাজের সমালোচনা করেন ইমরান খান নিজেও।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ছবিতে দেখছি নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়ে নওয়াজ শরীফের সঙ্গে পরামর্শ করছেন শাহবাজ শরীফ। এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চোরেরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, দেশের জন্য এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কি হতে পারে? এটা অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের লঙ্ঘন এবং প্রধানমন্ত্রীর শপথেরও বরখেলাপ।

শাহবাজ শরীফ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন। গত সপ্তাহে উজবেকিস্তানের সমরখন্দে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে অংশগ্রহণের পর তিনি রানী এলিজাবেথের শেষকৃত্যে যোগ দিতে চলতি সপ্তাহের শুরুতে লন্ডন যান। সেখান থেকে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক গেছেন।