হাঙ্গেরি: রাশিয়ার ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা বুমেরাং হয়েছে

ইউক্রেনে হামলার প্রেক্ষিতে রাশিয়ার ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা বিশ্ব। তবে এই নিষেধাজ্ঞার জেরে রাশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপও বড় ধরনের সংকটে পড়ে গেছে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ইইউর এসব নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, সিদ্ধান্তগুলো হিতে বিপরীত হয়েছে। ইউরোপসহ পুরো বিশ্বে জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। এতে ইইউই কঠিন বিপদে পড়ে গেছে। খবর রয়টার্স।

ভিক্টর অরবান

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) হাঙ্গেরির পার্লামেন্টে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান। এ সময় তিনি বলেন, এই সংকটের জেরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সরকার পতন হলে তাতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই। গত রোববার ইতালিতে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন তিনি।

মূল্যস্ফীতিসহ নানামুখী অর্থনৈতিক চাপের মুখে গত জুলাইয়ে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগির পদত্যাগ করেন। এর কিছুদিন আগে বিভিন্ন অভিযোগে জেরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নিজেই বিপদে পড়ে গেছে ইইউ

বক্তব্যে অরবান আরো বলেন, আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে ইউরোপীয় জনগণ আরও দরিদ্র হয়ে উঠছে। কিন্তু রাশিয়ার তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তারা অচল হয়ে পড়েনি। আসলে ইইউর অস্ত্রটি ব্যাকফায়ার করেছে। এটি বুমেরাং হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ইউরোপ নিজেকে পায়ে গুলি করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ব্রাসেলসের কাছে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি, আর কতদিন আমরা এভাবে চলব? এ সময় তিনি মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করার সময় এসেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই নিষেধাজ্ঞা নীতির কড়া সমালোচক ভিক্টর অরবান গত এপ্রিলে টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী পদে পুনর্র্নিবাচিত হয়েছেন। তবে যুদ্ধের জেরে দেশটি এখন ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, ভোক্তাদের আস্থা হ্রাস এবং আগামীতে মন্দার আশঙ্কার মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের এ যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হবে। আর এ জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে হাঙ্গেরিকে।

অরবান জানান, জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় তার সরকার দীর্ঘমেয়াদী শক্তি কৌশল সংশোধন করেছে এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জীবনকাল বাড়ানোর লক্ষ্যে তার দীর্ঘমেয়াদী শক্তি কৌশল সংশোধন করেছে এবং ইইউ তহবিল ব্যবহার করে মোট ৩২টি বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এ সময় তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, যদি ব্রাসেলসের আমলারা আমাদের প্রাপ্য এই অর্থ না দেয়, তাহলে আমরা অন্যান্য আর্থিক উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তহবিল পাব। হাঙ্গেরি বিষয়টি নিয়ে ইইউর পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথেও আলোচনা শুরু করেছে। তবে এই সব অংশীদারের সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কোনো কিছু জানাননি।

ইউক্রেনে সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়ার অভিযান। এই যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে সারা বিশ্বে জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। এর প্রেক্ষিতে ইউরোপের দেশগুলোকে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সইতে হচ্ছে।

কারণ, ইউরোপের বেশিরভাগই দেশই রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু রাশিয়া তাদের জ্বালানি সরবরাহ কমিয়ে বা বন্ধ করে দেওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছে। এর ওপর আসন্ন শীতে, যখন জ্বালানির চাহিদা অন্য সময়ে তুলনায় অনেক বেড়ে যায়, তখন কীভাবে এ সংকট সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে অনেক দেশই এখন দুশ্চিন্তায় সময় পার করছে।