কোন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে রাশিয়া

ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আলোচনা দিনদিন বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল নিউইয়র্কে এক তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বলেছেন, নিউক্লিয়ার আরমাগেডন বা পারমাণবিক প্রলয়ের ঝুঁকি ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের পর এখন সবচেয়ে বেশি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রুশ কর্মকর্তারা রাশিয়া কি পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে তার একটি ধারণা দিয়েছেন।

রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ডকট্রিনের কোনো ব্যত্যয় হবে না বলে জানিয়েছেন দিমিত্রি পেসকভ

রাশিয়া সর্বাবস্থায় পারমাণবিক যুদ্ধ এগানোকে অগ্রাধিকার দেবে বলে মন্তব্য করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। চলতি সপ্তাহে চেচেন নেতা রমজান কাদিরভের প্রস্তাব অনুযায়ী ইউক্রেনে ‘সীমিত মাত্রায় পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের’ সম্ভাবনা নাকচ করে পেসকভ বলেন, পারমাণবিক মারণাস্ত্র প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাশিয়া এ সংক্রান্ত দর্শন ও নীতিমালা কঠোরভাবে অনসুরণ করবে।

রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র সংক্রান্ত মতবাদ বা নীতি অনুযায়ী, পারমাণবিক হামলার শিকার হলে অথবা এমন হামলার আশঙ্কা দেখলে দেশটি এসব অস্ত্র প্রয়োগ করবে। রাশিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি দেখা দিলেও এমন অস্ত্র ব্যবহারের বিধান রয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথাগত অস্ত্র প্রয়োগে বড় ধরনের হামলা চালানো হলেও দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আলোচনা ও আশঙ্কা উসকে দিয়েছেন রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাশিয়া স্পষ্ট করেছে কখন কি পরিস্থিতিতে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, রাশিয়া নিজের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার্থে যে কোনো ব্যবস্থা নেবে। এটা কোনো ফাঁকা বুলি নয়। ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ক্রেমলিনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

পুতিনের ওই হুমকি ফাঁকা বুলি নয় মন্তব্য করেছেন জো বাইডেনও। গতকাল নিউইয়র্কের বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা এমন এক মানুষের মুখোমুখি যাকে আমি ভালোভাবে চিনি। তিনি মজা করতে কৌশলগত পারমাণবিক, জীবাণু অথবা রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের কথা বলছেন না, কারণ আমরা জানি তার সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে আশানুরূপ পারফরমেন্স দেখাতে পারছে না। 

পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে আতঙ্ক ছড়াতে ন্যাটোর ভূমিকাও কম নয়। চলতি সপ্তাহের শুরুতে ন্যাটো সদর দপ্তর থেকে সদস্য দেশগুলোকে রাশিয়ার কে-৩২৯ সাবমেরিন বেলগরদ সম্পর্কে সতর্কবার্তা জারির খবর প্রকাশিত হয় ইতালির দৈনিক লা রিপাবলিকায়। এতে বলা হয়, পারমাণবিক টর্পেডো পসিডন নিয়ে নিজের ঘাঁটি ছেড়ে অজ্ঞাতস্থানে যাত্রা করেছে বেলগরদ। রাশিয়া এ পসিডন মিসাইল পরীক্ষা করতে পারে বলে সতর্ক করে ন্যাটো।

লা রিপাবলিকায় ওই খবর প্রকাশের দুইদিন পর ব্রিটেনের দ্য টাইমস জানায়, প্রয়োজন হলে গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানান দিতে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে পারে রাশিয়া, এ মর্মে সদস্য দেশগুলোকে সতর্ক করেছে ন্যাটো। কৃষ্ণসাগরে এ পরীক্ষা চালানো হতে পারে বলেও ন্যাটোর সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়।