ভারতে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত ১০ হাজার হিন্দু

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার দলিত হিন্দু। গত বুধবার দিল্লির সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা রাজেন্দ্রপাল গৌতমের উপস্থিতিতে তারা বুদ্ধের বর্ণমুক্ত এবং অস্পৃশ্য ভারত গড়ার শপথ নেন। বিষয়টি নিয়ে ভারতজুড়ে তোলপাড় চলছে। খবর দ্য হিন্দু, টাইমসনাউ।

বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে হিন্দুরা

গত বুধবার ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসব বিজয়া দশমী। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা একে অশোক বিজয়াদশমী হিসেবেও পালন করে থাকে। ওইদিন দিল্লির আম্বেদকর ভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন দিল্লির সমাজকল্যাণ মন্ত্রী তথা আপ নেতা রাজেন্দ্রপাল গৌতম, ভারতীয় বুদ্ধ মহাসভা ও বুদ্ধিস্ট সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া। ওই অনুষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হন।

অভিযোগ করা হয়েছে, উক্ত অনুষ্ঠানে হিন্দু এবং হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন বি আর আম্বেদকরের আত্মীয় বৌদ্ধ সন্ন্যাসী রাজরত্ন আম্বেদকর। পরে অনুষ্ঠানের ছবি শেয়ার করেছেন দিল্লির মন্ত্রী রাজেন্দ্রপাল গৌতম। এরপর থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এ ঘটনাকে হিন্দু ও বৌদ্ধ- উভয় ধর্মের অপমান আখ্যা দিয়ে ওই মন্ত্রীর বরখাস্ত দাবি করেছেন, সেই সাথে দিল্লির ক্ষমতায় থাকা দল আপেরও কড়া সমালোচনা করেছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আপ মন্ত্রী গৌতম (ডান থেকে তৃতীয়)

বিজেপির তরফে আপের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তার দলের নেতা-কর্মীরা জয় শ্রীরাম ও জয় শ্রীকৃষ্ণ স্লোগান দেন। তার মন্ত্রীরাই দেবতাদের অপমান করছেন। তাই তারা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে দেশবাসীর সামনে কান ধরে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। বিষয়টি নিয়ে তারা মামলা করারও হুমকি দেন।

বিজেপি নেতা আদেশ গুপ্তা বলেন, ‘আপের জন্য এটা প্রথম ঘটনা নয়। হিন্দু দেব-দেবীদের অপমান ও অসম্মান করা আম আদমি পার্টির স্বভাবে পরিণত হয়েছে। আমরা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে অবিলম্বে তার মন্ত্রিসভা থেকে গৌতমকে বরখাস্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’

বিজেপির মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া দাবি করেন, কেজরিওয়ালের নির্দেশেই এই সব হয়েছে। এ জন্য তার উচিত কান ধরে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া। হিন্দুরা তার ঈশ্বরের অবমাননা সহ্য করবে না। আর যেসব মন্ত্রী বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, দাঙ্গা ঘটাতে চাইছে, তাদের অবিলম্বে বরখাস্ত করা হোক। কেজরিওয়াল যদি এটা না করেন তাহলে ধরে নেওয়া হবে ওই ঘটনার পেছনে আপনিও আছেন।

আপের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপি বলছে, আপ মন্ত্রী রাজেন্দ্রপাল গৌতম সমাজে দাঙ্গা উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এর জবাবে ওই মন্ত্রী দাবি করেন, অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল ভারতীয় বৌদ্ধ সমাজ। এর কোনো অংশের সঙ্গেই রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। বরং তিনি মন্ত্রী হিসেবে সব ধর্মকে সম্মান জানিয়েছেন।

বিজেপিকে পাল্টা দেশবিরোধী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতের সংবিধান যে কোনও ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দিয়েছে। ফলে এক্ষেত্রে বলার কিছুই নেই।’