ক্রিমিয়া সেতুতে বিস্ফোরণ, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ ক্রিমিয়া সেতুতে বিস্ফোরণে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সেতুর রেলট্র্যাকের অনেকখানিই পুড়ে গেছে। সড়ক পথের একাংশ ভেঙে নদীতে পড়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার দুর্যোগ মোকাবেলা ও সড়ক মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। খবর তাস, ইজভেস্তিয়া।

ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ ক্রিমিয়া সেতৃ

পুড়তে থাকা ক্রিমিয়া ব্রিজের ছবি শেয়ার করে এক টুইটে পোডোলিয়াক লিখেছেন, ‘ক্রিমিয়া ব্রিজ, শুরু। যা কিছু বেআইনি, সব অবশ্যই ধ্বংস করতে হবে। যা কিছু চুরি করা হয়েছে, সব অবশ্যই ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দিতে হবে। যা কিছু রাশিয়ার দখলে আছে, সব অবশ্যই ধ্বংস করতে হবে।’

রাশিয়ার ন্যাশনাল এন্টি-টেররিজম কমিটি বলেছে, সকাল ৬টার দিকে ক্রিমিয়া সেতুতে একটি ট্রাকে বিস্ফোরণ ঘটে। এর ফলে সৃষ্ট আগুন সড়কপথের উপরিভাগে অবস্থিত রেলট্র্যাকে চলাচলরত একটি তেলবাহী ট্রেনের পেছনের কয়েকটি ওয়াগনে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘ক্রিমিয়া সেতু পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি সরকারি কমিশন গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। সেতু সম্পর্কে জানতে তিনি প্রধানমন্ত্রী (অর্থনীতি) মিখাইল মিশুতসিন, উপ-প্রধানমন্ত্রী (অবকাঠামো) মারাত খুশনুলিন এবং পরিবহন মন্ত্রণালয় ও আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রধানদের ডেকেছেন ও তাদের বক্তব্য শুনেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ঘটনাস্থলে গেছেন।’

এর আগে সকালে রাশিয়ার ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আজ স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৫ মিনিটে কারশ প্রণালীর বুকে নির্মিত ক্রিমিয়া সেতুতে পারাপাররত একটি জ্বালানিবাহী ট্রেনে আগুন ধরে গেলে প্রায় চার ঘণ্টা পর তা নিয়ন্ত্রণে আসে।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে রুশ সাংবাদিকদের শেয়ার করা ফুটেজে দেখা যায়, সেতুটিতে সড়কপথের (রাশিয়া থেকে যাবার পথে) ডানদিকে কিছুটা উপরে সমান্তরাল রেলসেতুর অবস্থান। রেল সেতুতে একটি তেলবাহী ট্রেনের অনেকগুলো ট্যাংকারে এখনো দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। জ্বলন্ত ট্রেনের নিচে রেলসেতুর অনেক জায়গায় কংক্রিট পুড়ে পড়ে গেছে এবং সেখানে লোহার রড বেরিয়ে পড়েছে।

ক্রিমিয়ান রেলওয়ে জানিয়েছে, আগুনের ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। রাশিয়ান রেলওয়ে জানিয়েছে, ক্রিমিয়া অভিমুখে চলাচলকারী ট্রেন সার্ভিসের টিকেট বিক্রি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট স্পিকার ভ্লাদিমির কনস্তান্তিনভ বলেছেন, ইউক্রেনীয় সন্ত্রাসীরা ক্রিমিয়া সেতু ধ্বংস করেছে। শীঘ্রই এই সেতু পুনরায় সচল করা হবে। ক্রিমিয়ার প্রশাসনিক প্রধান সের্গেই আকসিয়ানভ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

ক্রিমিয়া সেতুতে হামলার এ ঘটনায় রাশিয়ায় অনেকে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রুশ পার্লামেন্টের প্রবীণ সদস্য ওলেগ ভিক্তরভিচ মোরোজভ বলেছেন, ‘এ হামলা স্রেফ চ্যালেঞ্জ নয়। এটা হচ্ছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নৈতিকতা ও আইনহীন যুদ্ধ ঘোষণা।’

সংবাদ পোর্টাল ভেদোমসস্তি বলেছে, ক্রিমিয়া সেতুতে হামলা রুশ প্রেসিডেন্টের উপর হামলার শামিল। কারণ ক্রিমিয়া সেতু বললে অনেকে পুতিন যুগ মনে করেন। যে পরিকল্পনা ও দক্ষতায় এ নাশকতা চালানো হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে নর্দস্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনে নাশকতায় জড়িতরাই এ কাজ করেছে।

ক্রিমিয়া গভর্নরের উপদেষ্টা ওলেগ ক্রিয়ুশকভ বলেছেন, ‘সেতু ধ্বংস হওয়ায় ক্রিমিয়া রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে ইউক্রেনের কেউ কেউ যে দাবি করছেন, তা ঠিক নয়। এগুলো আতঙ্ক ছড়ানোর অপচেষ্টা। সাময়িকভাবে মারিওপোলের সঙ্গে একটি ল্যান্ডব্রিজ স্থাপন করা হয়েছে। কয়েক মাসের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও তেল মজুত রয়েছে। ক্রিমিয়ায় অবকাশ যাপনরতদের হোটেলে চেক-ইন-পিরিয়ড বাড়ানো হয়েছে। ক্রিমিয়া সরকার এ ব্যয় বহন করবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সেতুতে ও দুই প্রান্তে আটকে পড়া গাড়ির চালকদের জন্য পানীয় জল, শৌচাগার ও জরুরি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রিমিয়া যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কুবান থেকে ছয়টি ফেরী সার্ভিস চালু করা হয়েছে।