তৃতীয় দফা ক্ষমতার দুয়ারে শি জিনপিং

শি জিনপিং, আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন চীনের প্যারামাউন্ট বা সুপ্রিম লিডার হিসেবেই। চীনের ক্ষমতাসীন কম্যুনিস্ট পার্টি আগামী ১৬ অক্টোবর রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হলে কংগ্রেসের আয়োজন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, চীনা কম্যুনিস্ট পার্টি ওই কংগ্রেসে জিনপিংকে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রাখার পক্ষেই সায় দেবে। এতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের রাজনীতিতে ইতিহাস গড়ে আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় বসছেন জিনপিং।

মাও সেতুংয়ের পর চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা শি জিনপিং

গণচীনের অবিসংবাদিত নেতা মাও সেতুংয়ের পর চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে দেখা হয় শি জিনপিংকে। এবার তৃতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট হলে চীনের ক্ষমতায় জিনপিংয়ের নিয়ন্ত্রণ হবে আরো সুসংহত। এমনও হতে পারে, আজীবনের জন্য ক্ষমতায় যাচ্ছেন ৬৯ বছরের জিনপিং।

চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর তিনটি পদ এখন রয়েছে জিনপিংয়ের হাতেই।

প্রথমত, চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে জিনপিংই এখন ক্ষমতাসীন দলটির এক নম্বর নেতা। দ্বিতীয়ত, চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনিই রাষ্ট্রের প্রধান। এছাড়া চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনিই দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার।

ধারণা করা হচ্ছে, পাঁচ বছরের মাথায় হতে যাওয়া ক্ষমতাসীন পার্টির আসন্ন কংগ্রেসে সেক্রেটারি জেনারেল ও সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান- এই প্রথম দুটি পদ নিশ্চিত হবে জিনপিংয়ের। এরপর আগামী বছর বসন্তে বার্ষিক ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট পদটিও তার হাতেই থাকবে। এরমধ্য দিয়ে জিনপিংই হতে যাচ্ছেন চীনা সুপ্রিম লিডার।

বেইজিংয়ে তিয়েনানমেন স্কয়ারের গ্রেট হলে আগামী ১৬ অক্টোবর কম্যুনিস্ট পার্টির ২৩০০ ডেলিগেট জড়ো হচ্ছেন এক সপ্তাহের জন্য। তাদের মধ্যে ২০০ জন হবেন ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। বিকল্প সদস্য হবেন আরও ১৭০ জন।

কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় কমিটি পার্টির পলিটব্যুরোর ২৫ সদস্যকে নির্বাচন করবে। পলিটব্যুরোর এই সদস্যরা পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে সাতজনকে নির্বাচন করবে। এই সাতজনই দলের এলিটদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এলিট বা ক্ষমতাধর।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, জিনপিংয়ের নতুন মেয়াদের শাসনামলে দেশটিতে কর্তৃত্ববাদী শাসন আরো পোক্ত হবে।

এ ব্যাপারে লন্ডনের সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ সাং বলেন, জিনপিংয়ের অধীনে পুরোমাত্রায় একটি একনায়ক রাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে চীন। মাও সেতুংয়ের আমলে দেশটিতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি তেমনটি না হলেও সেদিকেই এগুচ্ছে চীন।

অধ্যাপক সাং আরও বলেন, কম্যুনিস্ট পার্টির আসন্ন কংগ্রেসে পার্টির সংবিধানও বদলে দেওয়া হতে পারে।  কারণ, জিনপিংয়ের চিন্তাধারাই চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির দর্শন হয়ে উঠছে।

তিনি বলেন, চীনা সমাজতন্ত্রের স্বরূপ কী হওয়া উচিৎ, সেটি নিয়ে জিনপিংয়ের নিজস্ব চিন্তা-ধারা রয়েছে। মূলত তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শনের মূলে রয়েছে দৃঢ় জাতীয়তাবাদ। যদি তার চিন্তাভাবনাই দলের দর্শন হয়ে পড়ে, তবে দলই যে তাকে একজন স্বৈরাচারীতে পরিণত করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, চীন আগামী দিনে কোন পথে যাবে, সে ব্যাপারে যে কোনো ইঙ্গিত মেলার দিকে তাকিয়ে রয়েছে বিশ্ব। বিশেষ করে রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি ও পরিবেশ নিয়ে চীনের ভবিষ্যত ধ্যান-ধারণা বাকি বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।