সৌদি রাজপরিবারকে তেহরানের হুঁশিয়ারি

ইরানে চলমান বিক্ষোভ নিয়ে প্রচারণার বিষয়ে সৌদি রাজপরিবারকে সতর্ক করেছেন তেহরানের একজন প্রভাবশালী জেনারেল। ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেছেন, আমাদের তরুণদের উসকানি দিচ্ছে যেসব প্রচারমাধ্যম, সৌদি রাজপরিবারকে অবশ্যই সেগুলোর রাশ টেনে ধরতে হবে।

সৌদি তহবিলে পরিচালিত মিডিয়া উসকানি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেনারেল সালামি

জেনারেল সালামি বলেন, সৌদি আরব যেসব প্রচারমাধ্যমকে তহবিল জোগান দেয়, সেগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করলে সৌদি রাজপরিবারকে রেশ টানতে হবে। ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য সৌদি আরব তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলোকে ব্যবহার করছে। আল সৌদ পরিবারের কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে। কি করছেন তা দেখুন। এসব মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করুন। না হলে আপনারা এর দাম চুকাতে বাধ্য হবেন।

ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র বাহিনীর মহড়াকে সামনে রেখে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় জেনারেল সালামি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সৌদি তহবিলে পরিচালিত মিডিয়ার কথা বললেও নির্দিষ্ট কোনো প্রচারমাধ্যমের নামোল্লেখ করেননি।

এর আগে ইরানের একাধিক কর্মকর্তা বিদেশভিত্তিক ফারসি ভাষার কয়েকটি প্রচারমাধ্যম এবং বিশেষ করে লন্ডনের টিভি চ্যানেল ইরান ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে ভুয়া খবর প্রচার ও উসকানি সৃষ্টির অভিযোগ করেন। জেনারেল সালামি কোনো মিডিয়ার নাম না বললেও তার বক্তৃতার কয়েক ঘণ্টা পর আজ ভোরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আইআরজিসির সঙ্গে সম্পৃক্ত তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভি চ্যানেলকে উদ্দেশ করেই তিনি উপরের কথাগুলো বলেছেন।

তাসনিম নিউজ বলেছে, লন্ডনভিত্তিক ইরান ইন্টারন্যাশনাল সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। এছাড়া সৌদি সরকার দুবাইভিত্তিক আল-আরাবিয়া ও আল-হাদাস নিউজ নেটওয়ার্কে অর্থায়ন করে থাকে। এসব প্রচারমাধ্যম চলমান বিক্ষোভ সংক্রান্ত ভুয়া খবর প্রচার করছে এবং ইরানে অশান্তি সৃষ্টির জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভূমিকা রাখছে।

গত ৮ অক্টোবর ইরানের পার্লামেন্টের আইন ও বিচার বিষয়ক কমিটির সম্পাদক মোহাম্মদ আলি নাকদালি এমপি ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভি চ্যানেলের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকমের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে ইরান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় তিনি লন্ডনভিত্তিক আরও কয়েকটি ফারসি প্রচারমাধ্যমের নামোল্লেখ করে সেগুলোকে ‘মিথ্যার কারখানা’ বলে অভিহিত করেন।

এর আগে ২০১৮ সালে ইরান ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিল তেহরান। সে বছর সেপ্টেম্বরে ইরানে একটি সামরিক মহড়ায় প্রাণঘাতি সন্ত্রাসী হামলায় ৩০ জন নিহত হয়। ওই ঘটনার পরপর আরব স্ট্রাগল মুভমেন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব আহওয়াজ (এএসএমএলএ) নামে একটি আরব ইরানি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের মুখপাত্রের সাক্ষাৎকার প্রচার করে ইরান ইন্টারন্যাশনাল। সাক্ষাৎকারে এএসএমএলএ মুখপাত্র ‘আইনসম্মত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হয়েছে এবং ঠিক হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন।

সন্ত্রাসী হামলা সমর্থনকারীর সাক্ষাৎকার প্রচারের মাধ্যমে ইরান ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রচার নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে বলে অফকমের কাছে অভিযোগ করে ইরান সরকার। জবাবে অফকম বলেছে, ইরান ইন্টারন্যাশনাল কোনো আইন ভঙ্গ করেনি। যদিও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ওই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছিল।

২০১৮ সালের অক্টোবরে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি যুবরাজের সঙ্গে ইরান ইন্টারন্যাশনালের আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে। একটি গোপনীয় অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে ইরান ইন্টারন্যাশনালকে অর্থায়ন করা হয়। ওই অফশোর কোম্পানির পরিচালক এক সৌদি ব্যবসায়ী, যার সঙ্গে মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ট সংযোগ রয়েছে।

মিথ্যা প্রচারণা ইস্যুতে সৌদি আরবের প্রতি ইরানি জেনারেলের সতর্কবার্তা এমন সময়ে এলো যখন ইরান ও সৌদি আরব নিজেদের সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকদফা বৈঠক করেছেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। ধারণা করা হচ্ছে, ইরাকে দুই পক্ষের পরবর্তী বৈঠকে ইরানের পক্ষ থেকে সৌদি নিয়ন্ত্রিত প্রচারমাধ্যমের বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।