তুরস্কের ‘কুখ্যাত’ কারাগার পরিণত হচ্ছে জাদুঘরে

তুরস্কে গত শতাব্দীর আশির দশকে বন্দীদের নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত একটি কারাগারকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হচ্ছে। দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব প্রদেশ দিয়ারবাকিরে অবস্থিত জাদুঘরটি শিগগিরই উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কারাগারটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব নিয়েছে। খবর ইয়ানিশাফাক।

দিয়ারবাকিরের সেই কুখ্যাত কারাগার

১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৮০-এ সামরিক অভ্যুত্থানের পরে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সামরিক প্রশাসন ভবনটি দখল করে নেয় এবং তখন এর নামকরণ করা হয় মার্শাল ল মিলিটারি জেল। পরবর্তী সময়ে কারাগারটি ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর ভয়াবহ জুলুম-নির্যাতনের প্রতীক হয়ে ওঠে। এটি এতই কুখ্যাতি অর্জন করে যে, অসংখ্য চলচ্চিত্র ও প্রকাশনায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হয়ে ওঠে।

বায়রাম বোজাইল নামের একজন রাজনীতিবিদ ও লেখক জানান, তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর এই কারাগারে কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, সেই সময়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুরো তুরস্কে স্বৈরতন্ত্র কায়েম হয়েছিল। দিয়ারবাকিরের এ কারাগার সে সময়ে নানা ধরনের নির্যাতন, জুলুমের ভয়াবহতার সাক্ষী হয়েছিল। ওই সময় তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের হাতে অনেক ব্যক্তি নিহত হয়েছিল। আবার অনেকে তাদের নির্যাতনের হাত-পাসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে বসে।

তুরস্কের অসংখ্য কারাগার জাদুঘর মসজিদ ইত্যাদিতে রূপান্তরিত হয়েছে

বোজিয়েল বলেন, ওই কারাগারে মানব জীবনের মর্যাদা চূড়ান্তভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। সেখানকার নির্যাতন ভুক্তভোগী, তাদের পরিবারসহ সমাজকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।

এই কারাগারে সাত বছর কাটানো আব্দুর রহিম সেমাভি বলেন, যখন তাকে আটক করা হয়েছিল যখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬। তিনি দাবি করেন, কারাগারকে একটি জাদুঘরে রূপান্তর করা জরুরি ছিল। কারণ এর মাধ্যমেই ইতিহাসের অন্ধকার সময় সংরক্ষণ করা সম্ভব।

এরদোয়ান সরকার দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত এ কারাগারকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে এ দায়িত্ব প্রদান করা হয়। গত সাত বছর ধরে কারাগারটিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করার কাজ করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে তথ্য ও নথিপত্র সংগ্রহের পাশাপাশি এ কারাগারে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের জীবন নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছে।

দিয়ারবাকিরে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির এক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগলু বলেন, আমরা তিক্ত স্মৃতির উদ্রেককারী দিয়ারবাকির কারাগারকে একটি সাংস্কৃতিক জাদুঘরে রূপান্তরিত করছি। এখন থেকে দিয়ারবাকিরকে সংস্কৃতি, শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের স্থান হিসেবে স্মরণ করা হবে। কিছুদিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জাদুঘরটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।