সাইকেল কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছিল সেতু মেরামতের কাজ

ভারতের গুজরাটে ব্রিজ দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পর বেরিয়ে এসেছে সেতু ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতার ভয়ঙ্কর তথ্য। বিজেপি নিয়ন্ত্রিত মরবি মিউনিসিপ্যালিটি সম্প্রতি সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ দেয় ওরেভা গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। কখনো সেতু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ না করলেও কেন এ প্রতিষ্ঠানকে সেতুর দায়িত্ব দেওয়া হলো সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। খবর পিটিআই।

দেয়াল ঘড়ি, মশা মারার নেট ও বৈদ্যুতিক বাল্ব প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছিল সেতু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ

জানা গেছে, মরবি সাসপেনশন ব্রিজ নামের ঝুলন্ত সেতুটি ১৪০ বছর আগে ব্রিটিশ প্রশাসকরা নির্মাণ করেছিল। বহু পুরানো সেতুটি এতদিন বহাল তবিয়তে ছিল। সম্প্রতি ওরেভা গ্রুপ সেতুটির মেরামত কাজ সম্পন্ন করে। চারদিন আগে সেতুটি লোক চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জনপ্রতি ১৭ রুপি মাশুল দিয়ে সেতু পারাপার হতেন ব্যবহারকারীরা।

অভিযোগ উঠেছে, মেরামতের পর মরবি সাসপেনশন ব্রিজ এখনও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট পায়নি। এরপরও গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে আগেভাগে সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছে। সেতু পারাপারের মাশুল আদায়ের মাধ্যমে দ্রুত পকেট ভারি করার অভিযোগ উঠেছে ওরেভা গ্রুপের বিরুদ্ধে।

আহমেদাবাদ-ভিত্তিক ওরেভা গ্রুপ কি করে শত বছরের পুরানো সেতু মেরামতের কাজ পেল তা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন ভারতের সাংবাদিকরা। ওরেভা গ্রুপের অজন্তা ও অরপাট ব্রান্ডের সিএফএল বাল্ব, দেয়াল ঘড়ি, ই-বাইক ভারতে বাজারপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি আগে কখনো সেতুর কাজ করেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে ৪৫ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষক ওধাবজি রাঘবজি প্যাটেলের হাত ধরে ওরেভা গ্রুপের যাত্রা শুরু। গুজরাটের স্কুলে বিজ্ঞান পড়াতেন রাঘবজি প্যাটেল। দেয়াল ঘড়ি, বৈদ্যুতিক বাল্ব প্রস্তুতের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে বার্ষিক টার্নওভার ৮০০ কোটি রুপি। ওরেভা গ্রুপের ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ব্যবসার কথা থাকলেও কোথাও নির্মাণ খাতে সংশ্লিষ্টতার তথ্য নেই।

গুজরাটের মাছছু নদীর উপর নির্মিত মরবি সাসপেনশন ব্রিজকে স্থানীয়রা বলে ঝুলটা পুল। সাত মাস আগে ঝুলন্ত সেতুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত মার্চে মরবি মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃপক্ষ ওরেভা গ্রুপকে সেতু মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কাজ দেয়। গত ২৬ অক্টোবর গুজরাটি নববর্ষ উপলক্ষে সেতুটি লোক চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

সেতু দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ওরেভা গ্রুপের দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে দুর্ঘটনার পরপর ওরেভা গ্রুপের একজন মুখপাত্র বলেন, সেতুর মাঝামাঝি জায়গায় বিপুল সংখ্যক মানুষ সেতুটিকে দোলাতে থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।