এক দিনে ইউক্রেনে ৫০ মিসাইল নিক্ষেপ, ৬ বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস

ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস সিমহাল বলেছেন, ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ইউক্রেনের ১৮টি অতি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রাশিয়ার মিসাইল হামলায় ধ্বংস হয়েছে। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিটসকো বলেছেন, নগরীর ৮০ শতাংশ বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে, সাড়ে তিন লাখ ফ্ল্যাট বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে। কিয়েভ অঞ্চলের গভর্নর ওলেক্সি কুলেবা বলেছেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে কিয়েভের অধিবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।

খারকিভ শহরের একটি অবকাঠামোতে সোমবার সকালে মিসাইল হামলার দৃশ্য

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছে, রুশ বাহিনী সোমবার সকালে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ৫০টি মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। রাশিয়ার রোস্তভ এয়ারফিল্ড ও কাস্পিয়ান সাগর থেকে এসব মিসাইল ছোঁড়া হয়। এর মধ্যে ৪৪টি মিসাইল ইউক্রেনীয় বাহিনী ভূপাতিত করেছে।

সংবাদ পোর্টাল স্ত্রানা জানিয়েছে, সোমবার সকাল থেকে কিয়েভ, দনিপ্রোপেত্রোভস্ক, ভিনিৎসা, জাপোরিশিয়া, পোলটাভা,খারকিভ, কিরোভগ্রাদ, ঝিয়তমিরসহ ১৮টি অঞ্চলে মিসাইল হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় কিয়েভে দুইটি কম্বাইন্ড হিট অ্যান্ড পাওয়ার প্লান্ট (সিএইচপিপি ৫ ও ৬), লভিভ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ক্রেমেনচুং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, দনিপ্রোভস্কায়া জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, নভো দনিস্ত্রোভস্কায়া জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কানেভস্কায়া জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ইউক্রেনের বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে বড় হোল্ডিং কোম্পানি ডিটেক জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মেরামত করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। এর আগে ১০ অক্টোবর রুশ বাহিনীর মিসাইল ও ড্রোন হামলার পর ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রগুলো মেরামত করতে মজুত যন্ত্রপাতি ফুরিয়ে গেছে। বর্তমান অবস্থায় নতুন করে যন্ত্রপাতি আনতে সময় লাগবে।

জানা গেছে, বিদ্যুতের অভাবে কিয়েভ ও খারকিভে মেট্রোরেল ও ট্রাম সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। খারকিভ শহরে ট্রলি বাস সার্ভিসও বন্ধ রয়েছে। বেশ কয়েকটি শহরে পানি-বিদ্যুৎ সমস্যার পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্কও কাজ করছে না।

আজ বিকেলে কিয়েভের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক জরুরি বৈঠকে বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে মিসাইল হামলাকে বিপর্যয়কর অভিহিত করে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সবশেষ এ হামলার পর ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এতদিন ইউক্রেনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ট্রান্সফরমার সিস্টেম সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করে সরবরাহ অব্যাহত রাখলেও এখন তা ভেস্তে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, ক্রেমেনচুং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, দনিপ্রোভস্কায়া জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কানেভস্কায়া জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বড় উৎপাদন কেন্দ্রের পাশাপাশি ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নেটওয়ার্কের ৪০টি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা আজকের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ চলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১০ অক্টোবর রুশ বাহিনীর মিসাইল ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার কমপক্ষে ১৫ শতাংশ ধ্বংস হয়। আজকের হামলায় আরও অন্তত ১৫ শতাংশ উৎপাদন ও সরবরাহ সক্ষমতা ধ্বংস হয়েছে। এ অবস্থায় ইউক্রেনের একীভূত গ্রিড সিস্টেমে ভারসাম্য রাখা দুরুহ হয়ে পড়বে।

তারা বলেন, ১০ অক্টোবরের পর থেকে লাগাতার হামলায় ৩৩০ কেভি নেটওয়ার্কের ৬০ শতাংশ ট্রান্সফরমার ধ্বংস হয়েছে। পাশাপাশি যে ৭৫০ কেভি সঞ্চালন নেটওয়ার্ক রয়েছে, তা কেবল পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে। এ অবস্থায় স্টেপ-ডাউন ট্রান্সফরমার ছাড়া পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ সঞ্চালন করতে গেলে শিল্প-কারখানা ও বাসাবাড়ির বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি অতিরিক্ত ভোল্টেজে পুড়ে যাবে।