মার্কিন অর্থনীতিবিদের মতে, শুরু হয়ে গেছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ

মার্কিন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরিয়েল রুবিনি বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কার্যতঃ এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো জোটের জড়িয়ে পড়ার এবং তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা দিনদিন বাড়ছে। সত্যি কথা বলতে গেলে, ইউক্রেনে ও সাইবার স্পেসে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। খবর ডের স্পিগেল ও ফোর্বস।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কার্যতঃ শুরু হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন অর্থনীতিবিদ নুরিয়েল রুবিনি

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ডক্টর নুরিয়েল রুবিনি ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন খাতে ধস ও বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের আগে দুটি সংকটের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে তার বেশকিছু ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়ে যাওয়ায় মার্কিন ব্যবসায় ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অনেকে তাকে নেতিবাচকতার প্রবক্তা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ওয়াল স্ট্রিট সংশ্লিষ্টরা তাকে বলে ডক্টর ডুম।

ডের স্পিগেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রুবিনি তার বদনামের জবাবে বলেন, আমি নেতিবাচকতা নয়, বাস্তবতার কথা বলি। এজন্য আমার কথাগুলো নিতে অনেকের কষ্ট হয়। অথচ আমি যা বলি তা এমন নয় যে আর কেউ বলছে না। তাইওয়ান ইস্যুতে ধরুন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ট লোকরাই বলছেন, তাইওয়ান যথাসময়ে নিজের নোঙরে ভিড়বে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ব তেল কোম্পানি রসনেফতের প্রধান ইগর সেচিন বহির্বিশ্বে পুতিনের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। গত বৃহস্পতিবার ইগর সেচিন বলেছেন, তাইওয়ানের নিজের নোঙরে ফেরার প্রক্রিয়া শিডিউল অনুযায়ী চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব সেমিকন্ডাক্টর ও মাইক্রোচিপ শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট।

এ প্রসঙ্গে রুবিনি বলেন, তাইওয়ানের কম্পিউটার চিপ শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। সারাবিশ্বে প্রস্তুতকৃত মোট সেমিকন্ডাক্টরের ৫০ শতাংশ তাইওয়ান একাই জোগান দেয়। বিশ্বে উন্নতমানের যত সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুত হয়, তার ৮০ শতাংশই তাইওয়ান প্রস্তুত করে। যুক্তরাষ্ট্র এখন তেলের উপর যতটা, তার চেয়ে অনেক বেশি নির্ভর করে সেমিকন্ডাক্টরের উপর। চীন যদি তাইওয়ানে আক্রমন চালায়, কি অবস্থা হবে ভাবুন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন বলেছেন, তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণে চীন মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চেয়ে দ্রুত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে চাইছে। একইভাবে, সিঙ্গাপুরভিত্তিক কৌশলগত উপদেষ্টা আলেক্সান্ডার নিল বলেছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সে দেশের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনে নিজের অনুগত জেনারেলদের নিয়োগ দিয়েছেন। তাইওয়ান ইস্যুতে কালক্ষেপণের সুযোগ চীনের ভাবনায় ছিল না। ইউক্রেন পরিস্থিতি দেখে চীন বুঝে গেছে যে ধীরে ধীরে যুদ্ধ চালানোর ফাঁদে আটকানো যাবে না। কিছু করলে দ্রুত করতে হবে।

রুবিনি বলেন, খুব বড় পরিসরের সংঘাত এড়াতে হলে নীতিনির্ধারকদের রাশিয়া-ইউক্রেন ও চীনের পাশাপাশি ইরান-ইসরায়েলেও চোখ রাখতে হবে। দুই দেশ ক্রমশ যুদ্ধংদেহি অবস্থানে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি অবশ্যই অর্থনীতিতে চোখ রাখতে হবে। অর্থনীতির এখন যা অবস্থা, তাতে মুল্যস্ফীতি ও মন্দা এড়ানোর সুযোগ নেই। বড়জোর মন্দা কিছুটা বিলম্বিত করা যাবে।

তিনি বলেন, মন্দার ভয়ে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমাতে পারে। তবে এটা কোনো সমাধান নয়। মন্দা হবেই। এখন একমাত্র করণীয় হলো মুল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে সুদহার বৃদ্ধি করা। মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়তে গেলে মন্দা ও আর্থিক সংকটে পড়তে হবে। মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে না নামলে মূল্যস্ফীতি ও মন্দা দুটোরই মুখোমুখি হতে হবে এবং আর্থিক সংকটেও পড়তে হবে। অন্য কোনো পথ নেই। বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সংখ্যায় মানুষ দেউলিয়াত্বের দিকে পড়বে।