ভারতে ‘জনপ্রিয়’ ‘অজনপ্রিয়’ ইমরান খান

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই ইনসাফ পাকিস্তানের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান একই সাথে একজন সাবেক ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ। ফলে প্রতিবেশী ভারতেও তিনি একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। তবে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে তার অবস্থান ভারতে মিশ্র। গত বৃহস্পতিবার ইমরান খানের ওপর হামলার বিষয়টি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে ভারতেও। ওই দিনই এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, পাকিস্তানের পরিস্থিতির ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে ভারত। খবর বিবিসি।

হাসপাতালে ইমরান খান

ইমরান খানের ওপর হামলার বিষয়টি ভারতীয় গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। কোথাও কোথাও এটিই ছিল মূল শিরোনাম। ঘটনার নানা দিক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় রাজনৈতিক ভাষ্যকার সঞ্জয় বারু এ হামলাকে একটি টার্নিং পয়েন্ট বলে অভিহিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়।

১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয়ী ইমরান খান অনেক ভারতীয়র কাছেও জনপ্রিয় একজন ক্রিকেটার ছিলেন। সে সময় তিনি প্রায়ই ভারত সফরে যেতেন এবং বলিউডের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে নানা রকম খবরের শিরোনাম হতেন। ফলে অন্যসব ক্রিকেটারের চেয়ে তিনি একটু বেশিই পরিচিত ছিলেন ভারতীয় অঙ্গনে।

র‌্যালিতে ইমরান খান, ফাইল ছবি

তবে তার ব্যাপারে অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায় ২০১৮ সালে, যখন তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য প্রার্থী হন। সে সময় তিনি দেশে দুর্নীতি দূর করার বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা ভারতীয়দের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছিল। তিনি ভারতের সাথে একটি টেকসই এবং শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে এতকিছুর পরও তার প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়কালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না।

বিশেষ করে ২০১৯ সালে ভারতের কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভারতের আধা-সামরিক বাহিনীর ওপর হামলার প্রেক্ষিতে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। তবে সে সময় তিনি পাকিস্তান ভূখণ্ডে আটক পাইলট অভিনন্দনকে নিঃশর্তে মুক্তি দিয়ে অনেকের ধন্যবাদ পেয়েছিলেন।

একই বছরে ভারত সরকার সংবিধানে দেওয়া জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ সুবিধা বাতিল করলে ইমরান খান এর তীব্র নিন্দা জানান। তিনি এই পদক্ষেপকে কাশ্মির ও এর জনগণের ওপর আক্রমণ হিসেবে অভিহিত করেন এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারতের সাথে বাণিজ্য স্থগিত করেন।

২০২০ সালে গালওয়ান সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ভারত ও চীনা সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের পর থেকে চীনের সাথে পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ভারতের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। সবমিলিয়ে ইমরান খানকে (তার অবস্থানের জন্য) অনেকে অপছন্দ করতে থাকে।

সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনয়াত সে সময় বলেছিলেন, ইমরান খান ভারতে খুব পছন্দের একজন ব্যক্তিত্ব। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে ভারতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। ক্রিকেটের কারণে একজন ব্যক্তির সাথে যে বন্ধুত্বের চেতনা তৈরি হয়, যখন আপনি একটি দেশের নেতা হন এবং অন্য দেশটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, সেই বন্ধুত্বে চেতনা ম্লান হয়ে যায়।

এরপরও সাবেক এই কূটনীতিক ইমরান খানের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, দুই পক্ষের নিজেদের স্বার্থেই তারা এ রকম পর্যায়েও শান্তি ও স্বাভাবিকতা আশা করেন।