হঠাৎ ভূমধ্যসাগরে মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিন

হঠাৎ করে ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক মিসাইলবাহী সাবমেরিন ইউএসএস রোড আইল্যান্ড। ‘পারমাণবিক প্রলয়ের ঘোড়সওয়ার’ আখ্যা পাওয়া এ সাবমেরিন ২৪টি ট্রাইডেন্ট টু আন্তঃমহাদেশীয় পারমাণবিক মিসাইল বহন করছে। একই সময় ইউরোপে অবতরণ করেছে মার্কিন বিমান বাহিনীর বিশেষ উড়োজাহাজ মার্কারি ডুমস ডে, যাকে বলা হয় হারবিঞ্জার অব নিউক্লিয়ার ওয়ার বা পারমাণবিক যুদ্ধের অগ্রদূত।

মঙ্গলবার জিব্রাল্টারে নোঙর করে মার্কিন পারমাণবিক মিসাইলবাহী সাবমেরিন ইউএসএস রোড আইল্যান্ড

ব্রিটিশ দৈনিক এক্সপ্রেস জানিয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক সাবমেরিন ইউএসএস রোড আইল্যান্ড শনিবার সকালে জিব্রাল্টার প্রণালী ছেড়ে কৃষ্ণ সাগরের পথে রওনা হয়েছে। চারদিন আগে স্পেনের সীমান্তবর্তী ব্রিটিশ ছিটমহলটিতে পৌঁছে এ সাবমেরিন। রাশিয়া কোনো মিথ্যা অজুহাত তৈরি করতে পারে এমন আশঙ্কায় সাবমেরিনটি ব্রিটিশ নৌবাহিনীর কয়েকটি জাহাজের কড়া প্রহরায় জিব্রাল্টার ছেড়ে ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সমর বিশেষজ্ঞদের কাছে হর্সম্যান অব দ্য নিউক্লিয়ার অ্যাপোক্যালিপস বা পারমাণবিক প্রলয়ের ঘোড়সওয়ার আখ্যা পাওয়া সাবমেরিনটি মঙ্গলবার পূর্বনির্ধারিত সফরে জিব্রাল্টারে নোঙর করে। মার্কিন নৌবাহিনীর টাস্ক ফোর্স সিক্সটি নাইনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন জন ক্র্যাডক বলেছেন, ইউএসএস রোড আইল্যান্ডের জিব্রাল্টার সফর ওই অঞ্চলে মিত্র ও সহযোগীদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লৌহকঠিন অঙ্গীকারবদ্ধতাকে পুনর্ব্যক্ত করে।

ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরিতে মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিন ইউএসএস রোড আইল্যান্ডের আগমনের একদিন আগে ব্রিটেনের সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক মন্ত্রী জেমস হিপ্পি বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রুশ সাবমেরিনগুলো যখন নিজেদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তখন নৌ চলাচল ও আকাশে নজরদারির জন্য জিব্রাল্টার দারুণ বিকল্প হতে পারে।

জিব্রাল্টারে নিজেদের পারমাণবিক সাবমেরিনের আসার কথা বললেও সেখান থেকে সাবমেরিনটির কৃষ্ণ সাগরের পথে রওনা হবার বিষয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনী এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি। এই সাবমেরিনে থাকা ট্রাইডেন্ট পারমাণবিক মিসাইল ১২০০০-১৮০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে পারে।

২৪ ম্যাচ (ঘন্টায় ২৯ হাজার কিমি) গতির ট্রাইডেন্ট হাইপারসনিক মিসাইলের একমাত্র দুর্বলতা হলো, এর ট্র্যাজেক্টরি বা গতিপথ সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া যায়। রাশিয়ার কিনঝল ও ঝিরকন এক্ষেত্রে মার্কিন ট্রাইডেন্টের চেয়ে এগিয়ে কারণ কিনঝল ও ঝিরকন মিসাইলের গতিপথ আনপ্রেডিক্টেবল।

ইতালির সংবাদমাধ্যম লা রিপাবলিকা জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রতি সতর্কতা হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী রোড আইল্যান্ড সাবমেরিন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। শত্রুপক্ষের নজরদারি এড়িয়ে মাসের পর মাস সমুদ্রের তলদেশে চলাচল করতে পারে এ সাবমেরিন।

পারমাণবিক যুদ্ধের সময়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে মার্কিন বিমান বাহিনীর বিশেষায়িত উড়োজাহাজ মার্কারি ডুমস ডে

এদিকে রোড আইল্যান্ড সাবমেরিন জিব্রাল্টার ছাড়ার দিনে স্পেনের রোতা বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করেছে মার্কিন বাহিনীর বিশেষ উড়োজাহাজ মার্কারি ডুমস ডে। বোয়িং ই-সিক্স মডেলের উড়োজাহজটিকে ‘ডুমস ডে’ নাম দেওয়া হয়েছে কারণ এতে রয়েছে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর কৌশলগত কমান্ড সেন্টার, যাতে পারমাণবিক যুদ্ধ অথবা বিপর্যয়কর তেজষ্ক্রিয় বিচ্ছূরণের মূহূর্তে আকাশ থেকে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর কৌশলগত ইউনিটগুলোকে পরিচালনা করা যায়।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, মার্কারি ডুমস ডে টাইপের উড়োজাহাজ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত একটানা আকাশে অবস্থান করতে পারে। এসব উড়োজাহাজের দেহকাঠামো পারমাণবিক বিস্ফোরণের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভের সামনে অটল থাকতে ও আরোহীদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম।