সেনাপ্রধানের বিদায় সামনে রেখে পাকিস্তানে নানা ঘটনা

সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার অবসরগ্রহণের দিন সামনে রেখে পাকিস্তানের ক্ষমতাকেন্দ্রে ব্যস্ততা বেড়েছে। নিজেদের সর্বোচ্চ স্বার্থ সংরক্ষণে সম্ভাব্য বিকল্প নিয়ে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। রাওয়ালপিন্ডি, লন্ডন, লাহোরসহ নানা জায়গায় একের পর এক বৈঠক চলছে। আগামী কয়েকটি দিন খুব তাৎপর্যবহ বলে একাধিক রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। খবর ডন।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার চাকরির মেয়াদ ২৯ নভেম্বর শেষ হচ্ছে

বাজওয়ার অবসরকে সামনে রেখে গত কয়েকদিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হয়েছে রাওয়ালপিন্ডির সেনাসদরে। মঙ্গলবার সেখানে সেনাবাহিনীর কোর কমান্ডারদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেনারেল বাজওয়া এতে সভাপতিত্ব করেন। সেনাসদরে শীর্ষ কর্মকর্তারা রুটিনমাফিক প্রতি মাসেই একটি সভা করেন। সভায় অভ্যন্তরীণ ও বহিঃদেশীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতিসহ পেশাগত বিষয়াদি আলোচনা হয়।

কোর কমান্ডারদের মঙ্গলবারের সভাটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ দুটি কারণে- সেনাবাহিনীর কমান্ডে আসন্ন পরিবর্তন এবং তা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে প্রাসঙ্গিক বিতর্কের বিষয়গুলো এবং দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি। প্রতি মাসে কোর কমান্ডার সভা শেষে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে নিয়মমাফিক বিবৃতি দেওয়া হলেও মঙ্গলবারের বৈঠকের পর তা করা হয়নি।

সেনাপ্রধান পদে কে আসছেন বা থাকছেন তা নিয়ে দেশজুড়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চললেও এবারের কোর কমান্ডার কনফারেন্সের পর আইএসপিআর একেবারে চুপ থেকেছে। সভায় কি আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে কেবলমাত্র আগামী দিনগুলোয় কি ঘটছে সেদিকে চোখ রাখতে হবে।

কোর কমান্ডারদের সভার পরদিন বুধবার জেনারেল বাজওয়া সংক্ষিপ্ত সফরে পেশাওয়ার যান। তিনি সেখানে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করেন এবং পেশাওয়ার কোরের কর্মকর্তা ও সৈনিকদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেন। সেনাপ্রধানরা বিদায়ের আগে রেওয়াজ অনুযায়ী বিভিন্ন সেক্টর ও ফরমেশন পরিদর্শন করে থাকেন। বাজওয়ার বুধবার পেশাওয়ারে তার বিদায়ী সফর সম্পন্ন করেছেন বলে অনেকে ভাবছেন। এ অনুমান সত্য হলে বুঝতে হবে তিনি ২৯ নভেম্বর নির্ধারিত দিনেই বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেছেন, জেনারেল বাজওয়ার উত্তরসুরী বেছে নিতে প্রাতিষ্ঠানিক মনোনয়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কোর কমান্ডাররা মঙ্গলবার রাওয়ালপিন্ডির সভায় নিজেদের মতামত দিয়েছেন। পাশাপাশি তারা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির অব্যাহত সমালোচনা নিয়েও কথা বলেছেন।

সূত্র জানায়, কমান্ডে পরিবর্তনের আগে পিটিআইর সঙ্গে উত্তেজনা ও দূরত্ব কমিয়ে নিতে চায় সেনাবাহিনী, যাতে নতুন সেনাপ্রধান তুলনামূলক স্থিতিশীল আবহে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। এজন্য সরকার ও বিরোধীপক্ষ উভয়ের ওপর চাপ রয়েছে যাতে তারা পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছে। এটা হলে পিটিআইর লংমার্চের অবসান হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো অধিকতর জরুরি ইস্যুতে মনোযোগ দিতে পারবে।

জানা গেছে, রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের এ প্রয়াসে অন্যান্যদের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি বড় ভূমিকা রাখছেন। সম্প্রতি সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। এরপর তিনি ইমরান খানের শারীরিক অবস্থা দেখতে গিয়ে সেনা কর্মকর্তাদের দেওয়া বার্তাও পিটিআই প্রধানের পৌঁছে দিয়েছেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ জলবায়ু সম্মেলনে যোগদান শেষে মঙ্গলবার রাতে মিশরের শারম-আল-শায়খ ছাড়ার সময় টুইট করেন ‘পাকিস্তানে ফিরছি।’ তবে এরপর তিনি পরিকল্পনা বদলে মিশর থেকে কাতার যান। সেখান থেকে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে তিনি লন্ডন যান তার ভাই নওয়াজ শরীফের সঙ্গে বৈঠকের জন্য। নিজের ব্যক্তিগত স্টাফ ছাড়া কাউকে সঙ্গে নেননি শাহবাজ। তার সঙ্গে মিশরে যাওয়া অন্যান্য মন্ত্রীরা সরাসরি দেশে ফিরেছেন।

শাহবাজ শরীফের দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ, পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি, পিটিআইকে মোকাবেলার কৌশলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ নিতে তিনি নওয়াজের কাছে গেছেন। নওয়াজ চাইছেন পিটিআইর সঙ্গে সমঝোতায় না যেতে। বরং নির্বাচনের বিষয়ে সমঝোতা না হলে পিটিআইর সঙ্গে সেনাবাহিনীর দূরত্ব বাড়বে এবং তাতে মুসলিম লীগ লাভবান হবে বলে নওয়াজ মনে করছেন। নওয়াজ ও শাহবাজ তাদের কৌশল নিয়ে পিপিপি ও অন্যান্য শরিকদের সঙ্গেও কথা বলবেন।