মাহসা আমিনী আন্দোলনে যে কারণে বিভক্তি

মাহসা আমিনিকে নিয়ে চলমান যে আন্দোলন তা ইরানের সমাজ জুড়ে ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছে। কিন্ত সাম্প্রতিক দিনগুলিতে ধর্মগুরুদের মাথার পাগড়ি টেনে ফেলে দেওয়ার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে তা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে। ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মাহসা আমিনি নামের ২২ বছর বয়সি এক কুর্দি তরুণীর মৃত্যুর পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে ইরান। ঠিকমত হিজাব না পরার কারণে নৈতিকতা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হিজাবের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল; কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ততই এটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের যেসব কর্মকাণ্ড মাহসা আমিনী আন্দোলনকে বিভক্ত করছে

ক্ষমতাসীন মোল্লাদের প্রতি বিক্ষোভকারীদের তীব্র ঘৃণা এটিকে বর্তমানে ধর্মগুরুদের প্রতি ঘৃণায় পরিণত করেছে। ফলে রাস্তাঘাটে ধর্মীয়গুরু তথা আলেমদের দেখলেই মাথার পাগড়ি টেনে ফেলে দিতে দ্বিধা করছে না তরুণ বিক্ষোভকারীদের অনেকেই।

ধর্মগুরুদের হেনস্থা করার অনেক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা গেছে, কিছু বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারী ধর্মগুরুদের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে এবং পিছন থেকে তাদের মাথার পাগড়ি টেনে ফেলে দিচ্ছে। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে এই তথাকথিত প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছে। এটিকে তারা পাগড়ি ফেলে দেওয়ার আন্দোলন বলেও উল্লেখ করছে। তবে সব বিক্ষোভকারীই এতে সমর্থন দিচ্ছেন না। অনেকেই এটিকে হটকারী কর্মকাণ্ড বলে অভিহিত করছেন। এর ফলে মাহসা আমিনিকে নিয়ে চলমান এই আন্দোলন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে বলেও সতর্ক করে দিচ্ছেন তারা।  

যেসব বিক্ষোভকারী হিজাব আইন বাতিল করতে চান এবং তথাকথিত নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে আসছেন, তারা এই প্রবণতাকে অনৈতিক বলে উল্লেখ করছেন। বিতর্ক সত্ত্বেও পাগড়ি ফেলে দেওয়ার এই আন্দোলন মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করছে। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু তরুণ-তরুণী রাস্তায় হেঁটে যাওয়া ধর্মগুরুদের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে, তাদের পাগড়ি ছিনিয়ে নিচ্ছে এবং তাদের ফেলে দিচ্ছে। কিছু হামলাকারীকে সহিংসভাবে ধর্মগুরুদের মারতেও দেখা গেছে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে ধর্মীয় গুরুরাই সর্বোচ্চ নেতৃত্বে রয়েছেন। এছাড়া দেশটির প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ পদেও তারা অধিষ্ঠিত। একটি অনলাইন স্টোরের মালিক ডেলারাম, তিনিও হিজাববিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। তিনি মনে করেন, পাগড়ি ফেলে দেওয়ার এই আন্দোলন মূলত একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এতদিন ধর্মগুরুরা হিজাব নিয়ে নারীদের নির্যাতন করেছেন। এখন তাদেরকেও এ ধরনের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।

তবে তেহরানের একজন প্রতিবাদী ছাত্র পারাসতু বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, পাগড়ি ফেলে দেওয়ার আন্দোলনটি হিজাবের বিরুদ্ধে আমাদের যে বিক্ষোভ তাকে সস্তা করে দিচ্ছে। এটা দুঃখের বিষয়, কারণ যাদের পাগড়ি ফেলে দেওয়া হচ্ছে তারা সাধারণ ধর্মগুরু। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। আর আমাদের বিক্ষোভ মূলত এই ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধেই। কোন সাধারণ, নিরীহ ইরানি নাগরিকদের বিরুদ্ধে নয়।

এদিকে ইরানি গণমাধ্যম জানায়, পাগড়ি ফেলে দেওয়ার অভিযোগে এ পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধর্মগুরুদের মাথা থেকে পাগড়ি ফেলে দেওয়াকে শয়তানের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন মোহাম্মদ তাকি নকদ আলী নামের একজন প্রধান এমপি। তিনি এই কর্মকাণ্ডে জড়িতদের হুঁশিয়ার করে বলেছেন, তারা সিংহের লেজ নিয়ে খেলা করছে। সূত্র: মিডল ইস্ট আই