রাশিয়ার ‘লক্ষ্যচ্যুত’ ক্ষেপণাস্ত্র পোল্যান্ডে, নিহত দুই

ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পূর্ব পোল্যান্ডের প্রজেওডো গ্রামে এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুইজন নিহত হয়েছে। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করছে, হামলায় ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাশিয়ার তৈরি। তবে রাশিয়া এ দাবি অস্বীকার করছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে ন্যাটো। খবর রয়টার্স।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পোল্যান্ডের একটি জায়গা

রাশিয়ার যুদ্ধবিরতির আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ক্ষতিপূরণের শর্তারোপ করায় কয়েকদিন বিরতির পর মস্কো গতকাল মঙ্গলবার আবারো ইউক্রেনে হামলা চালায়। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় লিভিভ শহরেও রাশিয়ার কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। সীমান্ত শহরটির দূরত্ব পোল্যান্ড থেকে ৮০ কিলোমিটারেরও কম। ফলে গতকালের হামলার সময় লক্ষ্যচ্যুত হয়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রার্থমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পোল্যান্ডের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আধা কিলোমিটারের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণটি ঘটে। এতে দুইজনের প্রাণহানি হয়। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেবিগনিউ রাউ এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা প্রদানের দাবিতে রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছেন।

একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, পোল্যান্ডে ঢুকে পড়া রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের কারণেই পূর্বাঞ্চলীয় গ্রামটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা এখনো বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি।

ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ

পেন্টাগন মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার বলেন, ইউক্রেন সীমান্তের কাছে পোল্যান্ডের অভ্যন্তরে দুটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে- আমরা এমন সংবাদ পেয়েছি। তবে এই সংবাদগুলোকে সমর্থন করার মতো কোনো তথ্য এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখছি আমরা। এদিকে বিস্ফোরণের পর পোল্যান্ড সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করছে বলে জানা গেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড আক্রমণ করেছে। সামষ্টিক নিরাপত্তার ওপর রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা খুবই বড় ধরনের একটি উসকানি। আমাদের অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তবে রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো ভিন্ন দাবি করছে। তারা বলছে, পোল্যান্ডে আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাশিয়ার নয়, সেগুলো ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র। একজন রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞ জানান, রাশিয়ার ব্যবহৃত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম নয়। বরং ইউক্রেনের এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থারই এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য। সংস্থাটি সদস্যদের সম্মিলিত প্রতিরক্ষার বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ফলে ইচ্ছাকৃত কিংবা দুর্ঘটনাবশত হোক। রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে চলমান যুদ্ধের বিস্তার লাভের শঙ্কা বেড়েছে।

ন্যাটো একজন কর্মকর্তা বলেন, জোট বিস্ফোরণের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এবং পোল্যান্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সমন্বয় রক্ষা করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার সঙ্গে কথা বলেছেন ন্যাটোপ্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। এ প্রসঙ্গে এক টুইটে ন্যাটোপ্রধান বলেন, ন্যাটো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরামর্শ করছে। কারণ সব তথ্যের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে জোট সদস্য পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে আলোচনা করতে ন্যাটোর রাষ্ট্রদূতরা আজ বুধবার বৈঠকে বসছেন। জোটের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দপ্তরে সংস্থার মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গের সভাপতিত্বে জরুরি বৈঠকে বসবে সদস্যরা।