‘রাশিয়ানরা স্বেচ্ছায় যাবে না, তাদের বিতাড়িত করা হবে’

ইউক্রেনের মারিউপোলের মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো বলেছেন, রাশিয়ান সেনারা কখনই স্বেচ্ছায় শহর ছেড়ে যাবে না। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী তাদের বিতাড়িত করবে। এ ব্যাপারে তিনি এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে, রাশিয়ানরা চলে যাওয়ার পরই যেন শহরটি পুনর্গঠন শুরু করা যায় সেজন্য ইউরোপীয় ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইবি আরডি) সঙ্গে চুক্তিতে সই করতে পোল্যান্ড সফরে গেছেন। খবর বিবিসির।

মারিউপোলের মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো

বয়চেঙ্কো বলেন, তারা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে মারিওপোলের ক্ষতির পরিমাণ ও সার্বিকভাবে এটিকে পুনর্গঠনের ব্যাপারে পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন।

তার মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মারিউপোল সবচেয়ে ভারী বোমা, গোলাবর্ষণ ও রকেট হামলার শিকার হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার আক্রমণের কয়েকদিনের মধ্যে তারা মারিউপোলকে অবরুদ্ধ করে রাখে। সে অবস্থায় মারিউপোলের সাধারণ জনগণ, সেনাসদস্যরাসহ অধিকাংশই সোভিয়েত-যুগের আজভস্টাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কারখানার টানেলে আশ্রয় নেয়। সে অবরোধে কমপক্ষে ২০ হাজার লোক নিহত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া মারিউপোল

শহরটির মেয়র বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুই বছর জার্মান সৈন্যদের দখলে থাকার সময় মারিউপোলের যতটুকু ক্ষতি হয়েছিল, রাশিয়ান সৈন্যরা দুই মাসে তারচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। পুরো শহরের অবকাঠামোর ৯০ শতাংশই কম বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছ। ১৫টি হাসপাতালের মধ্যে ১১টি, ৬৩টি স্কুলের মধ্যে ৩৯টি ও ৭৯টি কিন্ডারগার্টেনের মধ্যে ২৫টি পুরোপুরিভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

এদিকে রুশ সেনাবাহিনীও একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যাতে দেখা যায়, তাদের সামরিক প্রকৌশলীরা মারিউপোলের অংশগুলো পুনর্নির্মাণ করছে। ফলে প্রশ্ন ওঠে তাহলে কি রাশিয়ানদের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন মারিউপোল পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা করা হচ্ছে?

মেয়র বয়চেঙ্কো এর তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন, এর প্রশ্নই ওঠে না। আমরা সে সব সন্ত্রাসীর সঙ্গে কোনো আলোচনা করি না যারা আমাদের শহরকে ধ্বংস করেছে, মারিউপোলের হাজার হাজার বাসিন্দাকে হত্যা করেছে। রাশিয়ান দখলদাররা ভয়ানক ও শক্তিশালী কিন্তু এটি সত্য যে, তারা অস্থায়ী।

ক্রিমিয়া ও দোনবাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা মারিউপোল শহরটি অবস্থানগত কারণে রাশিয়ার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া খুব সহজে এটি ছেড়ে দেবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। বরং তারা সেখানে তাদের অবস্থান দৃঢ় করছে। আগামী বসন্ত নাগাদ সেখানে আরো রুশ সেনা যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে মেয়র বয়চেঙ্কো মনে করেন, খেরসন থেকে রুশ বাহিনী যেভাবে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে, মারিউপোল থেকেও সেভাবে সরে যাবে। তিনি বলেন, আমরা দক্ষিণ দিকে আরও অগ্রগতি আশা করছি। সামরিক বাহিনী আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, আগামী বসন্তে আমাদের ভূমি থেকে রাশিয়ানদের বিতাড়িত করা হবে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বাস করি, যারা  দেশকে সেবা করে ও রক্ষা করে।

তাহলে শেষ পর্যন্ত মারিউপোল আবারো জেগে উঠতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে শহরটির মেয়র বলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। যুদ্ধের ছাই থেকে অনেক শহরের পুনর্জন্ম হয়েছে। ওয়ারশ, গডানস্ক, রটারডাম, ড্রেসডেন শহরগুলো এরই উদাহরণ। ইবি আরডি, বিশ্বব্যাংক ও ইউএসএআইডির মতো অংশীদারদের সহায়তায় মারিউপোল পুনরুজ্জীবিত হবে এবং আগের চেয়ে বরং আরও বেশি শক্তিশালী হবে; এতে কোনো সন্দেহ নেই।