স্যুটকেসে মেয়ের লাশ, অনার কিলিংয়ে অভিযুক্ত মা-বাবা আটক

রাস্তার ধারে পড়েছিল একটি লাল স্যুটকেস। উৎসুক জনতার খবরে পুলিশ এসে স্যুটকেস খুলে আঁতকে উঠে। ভেতরে প্লাস্টিকে মোড়ানো এক তরুণীর লাশ! উত্তর প্রদেশের মথুরা শহরের ব্যস্ত সড়ক যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকাল বেলা লাশটি উদ্ধার দিয়ে দিন শুরু হয় পুলিশের।

ভারতে অনার কিলিংয়ের শিকার আয়ুষী চৌধুরী; রাস্তার পাশে লাশ পড়ে ছিল লাল স্যুটকেসে

লাশের মাথা-মুখে-বুকে ছিল আঘাতের চিহ্ন। পোস্টমর্টেমে জানা যায়, প্রচণ্ড শারীরিক নির্যাতন ও মারধরের পর মেয়েটির বুকে দুটি গুলি করা হয়েছে। গুলিতেই মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে ওই তরুণীর।

তদন্তে নেমে পুলিশ তিনদিনের মাথায় সোমবার ওই তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত হয়। গ্রেপ্তার করা হয় তার মা-বাবাকে। বেরিয়ে আসে মৃত্যুর রহস্য।

অভিযুক্ত বাবা নীতেশ কুমার যাদব ও মা ব্রজবালাকে পুলিশ আটক করেছে। জব্দ করা হয়েছে নীতেশের লাইসেন্স করা পিস্তল ও লাশ ফেলায় ব্যবহৃত গাড়ি।

পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটির নাম আয়ুষী চৌধুরী। মেয়েটি ‘অনার কিলিং’য়ের শিকার। পরিবারের সম্মান বাঁচানোর নামে নিজের মা-বাবাই হত্যা করেছেন ২২ বছরের এই তরুণীকে।

আয়ুষী দিল্লির একটি বেসরকারি কলেজে পড়াশুনা করতেন। দিল্লিতেই পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। অন্য বর্ণের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করায় তাকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।

মথুরার পুলিশ সুপার অভিষেক যাদব বলেন, দ্রুততম সময়ে যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে লাল স্যুটকেসবন্দি আয়ুষী চৌধুরীর খুনের কিনারা করতে পেরেছেন তারা। পরিবারের ‘সম্মানরক্ষায়’ নিজের মেয়েকে খুন করেছেন নীতেশ যাদব। এতে ভাই ও মা জড়িত। এরইমধ্যে আয়ুষীর মাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, আয়ুষী পরিবারকে না জানিয়ে ছত্রপাল চৌধুরী নামে এক ভিন্নজাতের ছেলেকে বিয়ে করে  গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরার পর বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া হয় আয়ুষীর। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে নিজের বন্দুক দিয়ে গুলি করে মেয়েকে খুন করেন বাবা নীতেশ।

এর পর মেয়ের লাশ প্লাস্টিকে মুড়ে স্যুটকেসে ভরে নিজেই গাড়ি চালিয়ে ফেলে আসেন রাস্তায়। এ কাজে নীতেশকে সাহায্য করেন আয়ুষীর মা।

ভারতে প্রায়ই অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে।

মূলত তরুণ-তরুণী ভিন্ন ধর্ম বা ভিন্ন জাতের কারও প্রেমে পড়লে কিংবা মা-বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করলে পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে তাদের খুন, লাশ গুম করা হয়।

এক্ষেত্রে অনেক সময় বাবা বা বড় ভাই কিংবা পরিবারের অন্যরা জড়িত থাকে।