উহানে কোভিডের প্রথম সংক্রমণ এখনও রহস্য, কী লুকাচ্ছে চীন?

চীনের উহানে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানব শরীরে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে, এরপর তা পর্যায়ক্রমে বিপর্যয় ডেকে আনে বিশ্বে। তিন বছরে গোটা পৃথিবীতে ৬৬ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এই মহামারি ঠিক কীভাবে শুরু হয়েছিল তা আজও অজানা।

উহানে কোভিডের প্রথম সংক্রমণ এখনও রহস্য, কী লুকাচ্ছে চীন?

বিভিন্ন গবেষণায় নানা তথ্য উঠে এসেছে কোভিডের উৎস সম্পর্কে। শুরুতে জানা গিয়েছিল, উহানের সি-ফুড মার্কেটের বন্যপ্রাণী থেকে মানুষের শরীরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। আবার পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোও বলে আসছে, করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে উহানের ল্যাব থেকে।

ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয়তে কোভিডের উৎস নিয়ে তথ্যগুলোকে ‘ব্লাক বক্স’ এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ ঠিক কী ঘটেছিল, তা আজও জানা যায়নি। তাহলে চীন আসলে কী লুকিয়েছিল, নানা বিশ্লেষণ তুলে ধরে সেই প্রশ্নও করা হয়েছে সম্পাদকীয়তে।

ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ‘একেবারে শুরুর সংক্রমণ বা প্রথম সংক্রমণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু দিতে পারত ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে। কিন্তু সে সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি। তারা দেখাতে পারত ‘জুনোটিক স্পিলওভার’ বা বন্যপ্রাণী থেকে প্যাথোজেন মানুষের শরীরে ছড়ানোর মাধ্যমে মহামারির প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। আর সেটি সম্ভবত ঘটেছে উহানের হুনান সি-ফুড মার্কেট থেকে। কিংবা উহানের কোনো ল্যাবে গবেষণাসংক্রান্ত দুর্ঘটনায় এই মহামারির প্রাদুর্ভাব ঘটেছে।

শুরুর দিকের সংক্রমণগুলোর তথ্য জনস্বাস্থ্যের ভুল পদক্ষেপগুলোকে তুলে ধরতে পারত, যে ভুল পদক্ষেপ এই ভাইরাস গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করেছিল। শুরুর তথ্যগুলো প্রাথমিক সতর্কতা এবং নজরদারি ব্যবস্থার ব্যর্থতার ইঙ্গিত দিতে পারে। ফলে ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় হয়েও উঠতে পারে এটি।

এ ছাড়া ভাইরাসের উৎস নিয়ে শুরুর তথ্য জানতে পারলে প্রকাশ করা যেত, চীন ঠিক কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জনগণের কাছ থেকে গোপন করেছিল।
বেইজিং সরকার জোর দিয়ে বলছে, করোনাভাইরাস চীনের বাইরে থেকে আমদানি করা হিমায়িত খাদ্যের মাধ্যমে এসেছে। কিন্তু ভাইরাসের উৎস ঠিক কোথায়, তা বের করার চাবিকাঠি চীনের কাছেই রয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনাভাইরাস ঠিক কতদূর পর্যন্ত ছড়িয়েছিল তা বের করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সম্ভবত করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণের ঘটনাটি সবার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। আর তারপর যখন শনাক্ত হলো, সে সময় ডাক্তার ও নার্সরাও একে নতুন রোগ হিসেবে ধরেনি। এরপর ভাইরাস শনাক্ত এবং ভাইরাস যে ছড়িয়ে পড়ছে সে ব্যাপারে স্বীকৃতি দিলেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্থানীয় ও জাতীয় উভয়ক্ষেত্রেই গোপন করেছিল চীনের সরকার।

আর এখন যা প্রয়োজন তা হলো- পরবর্তী মহামারি প্রতিরোধ করতে এবং করোনাভাইরাস মহামারিকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য একটি গুরুতর টেকসই এবং বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত প্রয়োজন।