৯০ বছর আগের 'গণহত্যা'র পুনরাবৃত্তি দেখছে ইউক্রেন!

সোভিয়েত শাসনের অধীনে ১৯৩২-৩৩ সালে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল ইউক্রেনে। এই দুর্ভিক্ষে অন্তত চার মিলিমন বা ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ইউক্রেনীয়দের মনে নতুন করে সেই ভয় ও শঙ্কা আবার জেগে উঠেছে। তারা ৯০ বছর পর আবারও মহাদুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে। ইতিহাসবিদদের অনেকেই ওই দুর্ভিক্ষকে ‘গণহত্যা’ আখ্যায়িত করেছেন। এএফপির খবর।

অনুষ্ঠানটি স্টালিনের আমলে না খেয়ে মৃত্যুবরণকারীদের স্মরণে আয়োজন করা হয়

সময়টা ছিল জোসেফ স্ট্যালিনের শাসনামল। এই আমলে লাখ লাখ লোক মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে না খেয়ে মারা গিয়েছিল। এটা অনেকে গণহত্যাও বলে থাকে। ৬১ বছর বয়সী সাবেক নার্স গান্না পার্চুকের স্মৃতিচারণে সেই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ধরা পড়েছে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেন আবার সেই ভয়াল দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে পারে। ৯০ বছর পর আবারও ফিরে আসতে পারে স্টালিনের সময়কালের পরিস্থিতি।

গান্না পার্চুক গত শনিবার মধ্য কিয়েভের একটি হলোডোমোর মেমোরিয়াল সেন্টারে উপস্থিত হন। সেখানে কালো ও রূপালি পোশাক পরা এক ডজন পুরোহিত জড়ো হয়েছিলেন। অনুষ্ঠানটি স্টালিনের আমলে না খেয়ে মৃত্যুবরণকারীদের স্মরণে আয়োজন করা হয়। তীব্র ঠাণ্ডা থাকলেও অনুষ্ঠানটি খোলা আকাশের নিচে আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে আচবিশপ ফিলারেট মৃতদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একটি স্তম্ভ রয়েছে, যেটি একটি মেয়ের মূর্তি, যার বুকে গমের কিছু ডালপালা আটকে আছে। মূর্তিটি দুর্ভিক্ষের প্রতীক। ফিলারেট বলেন, যারা দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছিল তাদের জন্য প্রার্থনা করি। হলোডোমের ফসলের অভাবে ঘটেনি, এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছিল।

পার্চুক মনে করেন, ১৯৩০ এর দশকের ওই দুর্ভিক্ষ মূলত গণহত্যা ছিল। আর এখন যা ঘটছে তাও গণহত্যা। কারণ ইউক্রেনে প্রচুর গম জন্মে। মাটি খুবই উর্বর। এরপরও ওই দুর্ভিক্ষ কেন হয়েছিল এখনও গবেষণার বিষয়। কিছু ইতিহাসবিদ ওই দুর্ভিক্ষের নেপথ্যে স্টালিনের হাত ছিল বলে মনে করেন। আবার অনেকে মনে করেন, সোভিয়েত শিল্পায়ন ও কৃষির সমন্বয়করণের ফল ছিল দুর্ভিক্ষটি।

তবে ইউক্রেন আনুষ্ঠানিকভাবে ওই দুর্ভিক্ষকে গণহত্যা বলেই স্বীকার করে। তারা পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে এ ব্যাপারে একমত পোষণ করে থাকে। আর মস্কো তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

পার্চুক বৃদ্ধ বয়সে মনে করতে পারেন তার পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া অনেক কথা। তিনি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দুর্ভিক্ষের ভয়ঙ্কর গল্প শুনেছেন। তার শাশুড়ি যখন অল্প বয়সী ছিলেন, তখন দুর্ভিক্ষটি হয়েছিল। তারা একটি গ্রামে পরিবারের সাথে বাস করতেন। খাবার ছিল না। মানুষ মানুষের মাংস খাওয়া শুরু করেছিল। এ সময় পার্চুকের চোখ দিয়ে পানি ঝরতে দেখা যায়।