আপনি পড়ছেন

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) তৃতীয় মেয়াদে নেতা নির্বাচিত হওয়ার মাত্র পাঁচ সপ্তাহ পর অপ্রতিদ্বন্দ্বী কর্তৃত্বের মুখোশে ফাটল ধরেছে, যা পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসে সফলভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হয়েছিল। চীনে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় জারি করা শূন্য-কোভিড নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভকে সিসিপির কর্তৃত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন চীনের এই শীর্ষ নেতা।

xi unlikely to tolerate dissent as momentous protests shake chinaবিক্ষোভ চীনকে নাড়িয়ে দেওয়ায় ভিন্নমত সহ্যের সম্ভাবনা কম শি’র

এই বিক্ষোভ চীনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে দেশটিতে ভিন্নমতকে সহ্য করার সম্ভাবনা তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সমন্বয় ছাড়াই চীনজুড়ে রাস্তায় বিক্ষোভ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ এবং স্পষ্টভাবে কমিউনিস্ট পার্টি ও শি’র পদত্যাগ দাবি তোলা বাস্তবিক অর্থে নেতৃত্বের জন্য এক বড় আঘাত।

ইরানেও প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি চলছে। যদিও দুই দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও অস্থিরতার অনুমিত কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। একইভাবে ১৯৮৯ সালের প্রতিবাদের সঙ্গে এই বিক্ষোভের তুলনা করা প্রলুব্ধকর, তবে ভুল; যেমনটি গত দুই দশক ধরে বহু ভিন্নমতের সময় হয়েছে। তবে অনেক পর্যবেক্ষক সর্বসাম্প্রতিক বিক্ষোভের দুটি অন্যরকম কারণ সনাক্ত করেছেন।

১৯৮৯ সালের বিক্ষোভগুলো মূলত বেইজিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, তবে এবারের এগুলো ভৌগলিকভাবে অনেক বেশি বিস্তৃত। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে শি’র শূন্য কোভিড নীতি, যা মানুষকে রাস্তায় নামানোর জন্য যথেষ্ট। এ নিয়ে চীন যেভাবে কাজ করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কোভিড নীতি ঝেংঝোর কর্মীদের, ক্যাম্পাসের ছাত্রদের এবং জিনজিয়াংয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাজধানী উরুমকি জনগণকে একটি ফ্রেমে বেঁধে ফেলছে।

সম্প্রতি যেখানকার একটি বহুতল আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে দশজন মানুষ মারা গেছেন। এসব মৃত্যুর জন্য ওই কঠোর বিধিনিষেধকে দায়ী করা হচ্ছে। যে কারণে ফায়ারকর্মীদের সেখানে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। এ ঘটনার পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায় যে উরুমকির কমিউনিস্ট নেতারা কয়েক মাস ধরে চলা লকডাউনের জন্য ধৈর্যের জন্য অনুরোধ করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর দেশটিতে বিধিনিষেধ থাকলেও এটি বিক্ষোভকে উসকে দিতে দাহ্য পদার্থের মতো কাজ করেছে। সরকারের জন্য বড় অসুবিধা হলো অনুগত স্থানীয় কর্মকর্তারা, যারা কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। কেন্দ্রীয়ভূত নীতির ওপর তাদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ নেই, যা লকডাউন বা বিক্ষোভ শেষ করতে পারে। দোহায় ফুটবল উপভোগের মাস্কবিহীন দর্শকদের দৃশ্য এমন একটি দেশের জন্য আরও বেশি অপ্রীতিকর।

বেইজিং সরকার বলছে, তারা পশ্চিমা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের তুলনায় চীনে মৃত্যুর সংখ্যা ৬ হাজারের নিচে রেখে অর্থনীতির চেয়ে জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জনসাধরণের প্রতিক্রিয়ায় ১১ নভেম্বর জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করার জন্য একটি ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। যেমন- কোয়ারেন্টাইনের সময়কাল হ্রাস, করোনা রোগী নিশ্চিত হওয়ার ঘটনায় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করা। যাতে আশা করা হচ্ছে যে জীবন ও সাধারণে দৈনন্দিন আয় স্বাভাবিকের কাছাকাছি ফিরে আসবে। হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের জন্য এ পরিকল্পনা যথেষ্ট নয়, বরং এটি ভাইরাসের সঙ্গে বেঁচে থাকার পরিবর্তে নির্মূলের নীতিতে শিথিলতা দেয়। এটি চীনকে প্রবৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে আনতে পারে। কিন্তু প্রত্যাশিত শিথিলতা এখনো আসেনি।

গত সপ্তাহের বুধবার চীনে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নতুন করে স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছে, যা সর্বোচ্চ, এটি প্রায় অঞ্চলে দেখা দিয়েছে। রোবটবার এই সংখ্যা ৪০ হাজার ছুঁয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তিয়ানজিন, বেইজিং, দক্ষিণ চীনের উৎপাদনকেন্দ্র গুয়াংজুসহ শহরগুলোতে দৈনন্দিন জীবন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

শিজিয়াজুয়াংয়ে কোটির বেশি মানুষের বাস। দক্ষিণ-পশ্চিমের এই শহরটিতে করোনা বিধিনিষেধ সহজ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ বাড়ায় কয়েকদিনের মধ্যেই নিষেধাজ্ঞা কড়াকড়ি করেছে কর্তৃপক্ষ। চীন যদি শূন্য কোভিড নীতির অবসান ঘটায় তবে সংক্রমণের ঢেউ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পক্ষে মোকাবেলা করা কঠিন হবে। সেখানে খুব কম সংখ্যক বয়স্ক লোককে সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়া হয়েছে।

শি জিনপিং সম্ভবত দীর্ঘ সময়ের জন্য ভিন্নমত সহ্য করবেন না। কারণ তিনি কেবল বিক্ষোভকে তার কোভিড নীতির জন্য নয় বরং সামস্টিক কমিউনিস্ট মতাদর্শ এবং তার কর্তৃত্বের জন্যও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। ২০১৩ সালে পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শি’র নিয়োগের মাত্র কয়েক মাস পরে তিনি একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। যেখানে তিনি আদর্শিক আধিপত্য রক্ষার সর্বোত্তম গুরুত্ব সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘একবার আদর্শগত প্রতিরোধ লঙ্ঘন হলে অন্যান্য প্রতিরক্ষা নিশ্চিত রাখা খুব কঠিন হবে।’

সিসিপির প্রতিরোধ ব্যবস্থা কতটা দুর্বল বা কোনো বাঁধ ভেঙে গেছে কিনা, তা এখনো কেউ জানতে পারেনি। যেভাবেই হোক, হংকংয়ে চালানো নির্মম পদ্ধতিগুলো মূল ভূখণ্ডেও ব্যবহারের শঙ্কা করা হচ্ছে। এরপর যাই ঘটুক না কেন, বিশ্ব মঞ্চে ফিরে আসার কয়েক মাসের মধ্যে শির আন্তর্জাতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির জন্য এই বিক্ষোভ একটি বড় আঘাত।

চীনের পুনরুত্থান, পশ্চিমের পতন এবং ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তনের জন্য সিসিপির ক্ষমতা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক সব বক্তৃতা দিয়ে শি এখন মারাত্মক ও বিপজ্জনকভাবে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকার ঝুঁকি নিয়েছেন।

গার্ডিয়ানের কূটনৈতিক সম্পাদক প্যাট্রিক উইনটুর

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.