পশ্চিম তীরে ৩ হাজার জলপাই গাছ উপড়ে ফেলল ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর নিকটবর্তী একটি গ্রামে প্রায় তিন হাজার জলপাই গাছ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। স্থানীয় পরিষদ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং জমি দখলের অভিযোগের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটল, যা গাজায় চলমান যুদ্ধের ছায়ায় পশ্চিম তীরে সহিংসতার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আল-মুঘায়য়ির গ্রামে শূন্য দশমিক ২৭ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জলপাই গাছ উপড়ে ফেলার নির্দেশ জারি করেছে। এই গ্রামটি রামাল্লার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এবং এখানে প্রায় চার হাজার বাসিন্দা রয়েছে। সামরিক বাহিনী তাদের এই নির্দেশের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছে, গাছগুলো গ্রামটির মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি প্রধান ইসরায়েলি বসতি সড়কের জন্য ‘নিরাপত্তা হুমকি’ সৃষ্টি করছিল।

এই ধ্বংসকাণ্ড ঘটানো হয়েছে যখন আল-মুঘায়য়ির গ্রামটি বৃহস্পতিবার থেকে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। গ্রাম পরিষদের উপ-প্রধান মারজুক আবু নাইম ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফাকে জানিয়েছেন, শনিবার ভোর থেকে ইসরায়েলি সৈন্যরা ৩০টিরও বেশি বাড়িতে হানা দিয়ে বাসিন্দাদের সম্পত্তি ও যানবাহন ধ্বংস করেছে।

দশকের পর দশক ধরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনি ভূমি দখল এবং বাসিন্দাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে জলপাই গাছ উপড়ে ফেলছে, যা ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রতীক।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সামরিক এবং বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দুই হাজার ৩৭০টিরও বেশি হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হামলা রেকর্ড করা হয়েছে রামাল্লা এলাকায়, ৫৮৫টি। এরপর পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে নাবলুস অঞ্চলে ৪৭৯টি।

ওসিএইচএ জানিয়েছে, একই সময়ে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী এবং বসতি স্থাপনকারীদের হাতে ১২৯ জন শিশুসহ কমপক্ষে ৬৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শনিবার আল-মুঘায়য়িরে জলপাই গাছ উপড়ে ফেলার বিষয়ে আল জাজিরার মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া দেয়নি।

ফিলিস্তিনি গবেষক হামজা জুবেইদাত বলেছেন, ‘এ ধ্বংসকাণ্ড ইসরায়েলের ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত করার ‘নিরবচ্ছিন্ন’ প্রচেষ্টার অংশ। আমাদের স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের গ্রামাঞ্চল এবং শহরগুলো থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে উচ্ছেদ করার একই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। এখন যা ঘটছে তা ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। এটি ইসরায়েলের কোনো নতুন প্রক্রিয়া নয়।’

তিনি উল্লেখ করেন, আল-মুঘায়য়িরের একটি দীর্ঘ কৃষি ইতিহাস রয়েছে এবং পশ্চিম তীরের অন্যান্য গ্রামের মতো এটি প্রায় সম্পূর্ণভাবে কৃষি এবং পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল। যে এলাকায় তিন হাজারটির বেশি জলপাই গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে, সেটি রামাল্লা এলাকার সবচেয়ে উর্বর অঞ্চলগুলোর একটি।