গাজায় শিশুসহ আরও ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো সর্বশেষ হামলায় অন্তত ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শনিবারের এই নৃশংস হামলায় নিহতদের মধ্যে আটটি শিশু ও একজন নবজাতক রয়েছে বলে চিকিৎসা সূত্রের বরাতে জানা গেছে।

উত্তর গাজার জাবালিয়া আল-নাজলা শহরে কয়েকটি বাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলের গোলন্দাজ বাহিনীর হামলায় দুই শিশুসহ অন্তত তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

খান ইউনিসের আসদা এলাকায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় নেওয়া তাঁবুতে ইসরায়েলি গোলন্দাজ বাহিনী গোলাবর্ষণ করলে ছয় শিশু ও এক নবজাতকসহ ১৬ জন নিহত হন। এই হামলায় আরও অনেকে আহত হয়েছেন।

মধ্য গাজার মাগাজি শরণার্থী শিবিরে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি ড্রোনের পৃথক হামলায় দুজন নিহত ও অন্যরা আহত হয়েছেন।

এদিকে, খান ইউনিসের দক্ষিণ-পূর্বে মোরাগ অক্ষের কাছে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে সাহায্যের জন্য অপেক্ষারত এক ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত নেতজারিম করিডোরের কাছে ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত আরেক বেসামরিক নাগরিককেও গুলি করে হত্যা করা হয়।

গত ২৭ মে থেকে ইসরায়েল একতরফাভাবে ‘গাজা মানবিক সহায়তা সংস্থা’ নামক একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের চেষ্টা করছে, যা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত হলেও জাতিসংঘ এবং প্রধান ত্রাণ সংস্থাগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই ব্যবস্থার কারণে ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত ২,০৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৫,১৯৭ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এই ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাকে ‘মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

মধ্য গাজায় মাগাজি শরণার্থী শিবিরে একটি পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় আরও তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

একইভাবে, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি অ্যাপার্টমেন্টে ইসরায়েলি ড্রোন হামলার পর হতাহতের খবর জানিয়েছে আল-আওদা হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা দুটি মরদেহ এবং ২৬ জন আহত ব্যক্তিকে গ্রহণ করেছে। হতাহতদের বেশিরভাগই আবাসিক এলাকায় ড্রোন হামলা এবং ওয়াদি গাজার দক্ষিণে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া জনতার ওপর হামলার শিকার।

উত্তরাঞ্চলে গাজা শহরের জাইতুন এলাকায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ওই ভূখণ্ড পুনরায় দখলের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেখানে ব্যাপকভাবে ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত সামরিক অভিযানে ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই অভিযানে পুরো উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, গাজায় চালানো যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি হয়েছে ইসরায়েল।