জঙ্গিবিমান তৈরিতে একাট্টা জাপান, ব্রিটেন ও ইতালি

পরবর্তী প্রজন্মের জঙ্গিবিমান তৈরিতে নিজেদের বিদ্যমান প্রকল্পগুলো একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান, ব্রিটেন ও ইতালি। এখন থেকে তিন দেশ জঙ্গিবিমান প্রস্তুত করবে। আজ শুক্রবার তিন দেশের নেতাদের এক যৌথভাবে বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নজিরবিহীন এ পদক্ষেপের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া অন্য কোনো অংশীদারের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় নিয়োজিত হতে চলেছে জাপান। খবর রয়টার্স।

গত জুনে ফার্নবোরো এয়ার শোতে টেমপেস্ট জঙ্গিবিমানের মডেল উম্মোচন করে ব্রিটেন

জঙ্গিবিমান তৈরিতে যৌথ অংশীদারিত্বের জন্য তিন দেশ গ্লোবাল কমব্যাট এয়ার প্রোগ্রাম (জিসিএপি) শিরোনামে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর আওতায় ব্রিটেনের নেতৃত্বাধীন ফিউচার কমব্যাট এয়ার সিস্টেম বা টেমপেস্ট প্রযুক্তির সঙ্গে জাপানের এফ-এক্স জঙ্গিবিমান কর্মসূচির সমন্বয় ঘটিয়ে ২০৩৫ সাল নাগাদ একটি অগ্রসর ও সম্মুখ সারির ফাইটার জেট সিরিজ আনা হবে।

রাশিয়ার ইউক্রেন দখল এবং জাপান ও তাইওয়ানের চারপাশে চীনের সামরিক তৎপরতা বাড়তে থাকার প্রেক্ষিতে ব্রিটেন ও ইতালির সঙ্গে যৌথ এ কর্মসূচি জাপানকে তার তুলনামূলক বৃহত্তর ও শক্তিধর প্রতিবেশীদের মুখোমুখি হবার সামর্থ্য জোগাবে। একইসঙ্গে ব্রিটেনকেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত পূর্ব ও উত্তর এশিয়া অঞ্চলে নিজের সামরিক ভূমিকা বৃদ্ধির সুযোগ এনে দেবে।

জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তিন দেশের যৌথ উদ্যোগে নির্মিতব্য জঙ্গিবিমানের নকশা তৈরিতে নেতৃত্ব দেবে ব্রিটেনের বিএই সিস্টেমস, জাপানের মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইতালির লিওনার্দো। পরিকল্পিত জঙ্গিবিমানটি সাইবার যুদ্ধ ও কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে অগ্রসর ডিজিটাল-সামর্থ্যরে অধিকারী হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন জঙ্গিবিমানের আক্রমণ-সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকবে ইউরোপের মিসাইল প্রস্তুতকারক এমবিডিএ ও জাপানের এভিয়নিকস প্রস্তুতকারক মিৎসুবিশি ইলেকট্রিক করপোরেশন। জঙ্গিবিমানটির ইঞ্জিন তৈরিতে কাজ করবে রোলস রয়েস পিএলসি, জাপানের আইএইচএল করপোরেশন ও ইতালির এভিও অ্যারো।

তিন দেশের অংশীদারিত্বের আলোচনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একটি সূত্র জানিয়েছে, জঙ্গিবিমান তৈরির যৌথ প্রকল্পটি কিভাবে অগ্রসর হবে, কোন দেশ কতটুকু কাজে অংশ নেবে এবং কাজটি কোথায় হবে সে সব বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জঙ্গিবিমান প্রকল্পের কাজে সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারদের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে জাপানের বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় কিছু উন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছে ব্রিটেন।

ত্রিদেশীয় এ প্রকল্পে অন্যান্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে ব্রিটেন বলেছে, পরিকল্পিত এ জঙ্গিবিমান ব্রিটেনের বিদ্যমান টাইফুন বিমান বহর ও এফ-৩৫ লাইটনিং ফ্লিটের স্থলাভিষিক্ত হবে। ন্যাটো জোটের দেশগুলো যেসব জঙ্গিবিমান উড়িয়ে থাকে তার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে তিন দেশের এ প্রকল্পের ফসল।

ইউরোপের তিন দেশ ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেন ২০৪০ নাগাদ নতুন প্রজন্মের জঙ্গিবিমান বাজারে আনার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় জাপান, ব্রিটেন ও ইতালির তরফ থেকে এ বিবৃতি এলো। ইউরোপ-জাপান সহযোগিতার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, মার্কিন সরকার ব্রিটেন, ইতালিসহ সমমনা মিত্রদের সঙ্গে জাপানের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে সমর্থন করে।