ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছে ব্রিটিশ সৈন্যরা

ব্রিটিশ সৈন্যরা ইউক্রেনে বেশকিছু স্পর্শকাতর ও উচ্চ ঝুঁকির অভিযানে অংশ নিয়েছে। রাজনৈতিক ও সামরিক বিবেচনায় চরম ঝুঁকিপূর্ণ এসব অভিযান ছিল গোপনীয়। ব্রিটিশ রয়্যাল মেরিনসের সদ্যসাবেক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল রবার্ট ম্যাগোয়ান এ কথা জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনী প্রথমবারের মতো ইউক্রেন যুদ্ধে নিজেদের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করল। খবর দ্য টাইমস।

দুই সপ্তাহ আগে জেনারেল গোয়েন জেনকিন্সের কাছে রয়্যাল মেরিনসের কমান্ড হস্তান্তর করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল রবার্ট ম্যাগোয়ান (ডানে)

ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ জোগানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে ব্রিটেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ এতদিন অস্বীকার করেছে দেশটি। এবার প্রথম একজন ঊর্ধ্বতন জেনারেল ইউক্রেনে কিছু গোপন অভিযানে ব্রিটিশ বাহিনীর সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করলেন।

ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সবচেয়ে অভিজাত কমান্ডো ইউনিট রয়্যাল মেরিনসের সদ্যসাবেক কমান্ডার জেনারেল ম্যাগোয়ান জানিয়েছেন, ব্রিটিশ কমান্ডোরা ইউক্রেনে অত্যন্ত স্পর্শকাতর কিছু গোপনীয় অভিযানে অংশ নিয়েছে। রয়্যাল মেরিনসের অফিসিয়াল প্রকাশনা গ্লোব অ্যান্ড লরেলে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি এ কথা জানান। ‘রয়্যাল মেরিনস ডেপ্লয়েড অন হাই-রিস্ক কভার্ট অপারেশনস ইন ইউক্রেন’ শিরোনামে খবরটি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমস।

ম্যাগোয়ান তার নিবন্ধে জানান, চলতি বছরের শুরুতে ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশের পর ৪৫তম কমান্ডো ইউনিটের ৩৫০ জন মেরিনকে দ্রুত ইউক্রেনে পাঠানো হয়। এই কমান্ডোরা কিয়েভ থেকে ব্রিটিশ কূটনীতিকদের পোল্যান্ডে সরিয়ে নেয়। এরপর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কিয়েভ থেকে সৈন্য সরিয়ে নিলে এপ্রিল মাসে কমান্ডোরা আবার কিয়েভে ফিরে যায় এবং সেখানে ব্রিটেনের কূটনৈতিক উপস্থিতি পুনঃস্থাপনের কাজ সম্পন্ন করে।

ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এর আগে জানিয়েছে যে ইউক্রেনে ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মীদের সুরক্ষায় কমান্ডোরা সে দেশে অবস্থান করছে। ৩০ জনের মতো কমান্ডো মোতায়েন থাকার কথাও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে উল্লেখ করা হয়। তবে জেনারেল রবার্ট ম্যাগোয়ান জানিয়েছেন, উভয় দফায় ইউক্রেনে মোতায়েন থাকাকালে ব্রিটিশ কূটনীতিকদের সুরক্ষার পাশাপাশি রয়্যাল মেরিনসের কমান্ডোরা বেশকিছু বিশেষ অভিযানেও সংশ্লিষ্ট হয়েছিল।

এর আগে ডেনমার্ক ও সুইডেনের উপকূলে নর্দস্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ এবং কেরশ প্রণালীতে নির্মিত ক্রিমিয়া সেতুতে হামলার ঘটনায় ব্রিটিশ কমান্ডোরা জড়িত বলে দাবি করে রাশিয়ার বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা এসভিআর। নর্দস্ট্রিমে বিস্ফোরণ ও ক্রিমিয়া সেতুতে হামলা হয়েছিল যথাক্রমে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে। ব্রিটিশ সরকার সে দেশের নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে রাশিয়ার অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে নাকচ করে দেয়। রবার্ট ম্যাগোয়ানের নিবন্ধ প্রকাশের পর রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

ম্যাগোয়ান লিখেছেন, চলতি বছর জানুয়ারিতে নরওয়ের উত্তরাঞ্চলে গভীর শীত-কবলিত এলাকায় মোতায়েন ৪৫ কমান্ডো গ্রুপকে স্বল্প সময়ের নোটিশে ব্রিটিশ দূতাবাসকে পোল্যান্ডের রাজধানীতে সরিয়ে নেওয়ার কাজে মোতায়েন করা হয়। এটাকে চাইলে ট্রিপল নাইনের আন্তর্জাতিক ইমার্জেন্সি ফোর্স বলতে পারেন। এরপর এপ্রিলে কমান্ডোরা ওই দেশে কূটনৈতিক মিশন পুনঃস্থাপন ও অতি জরুরি কর্মকর্তদের সুরক্ষা দিতে ফিরে যায়। উভয় পর্বেই কমান্ডোরা চরম স্পর্শকাতর পরিবেশে উচ্চ মাত্রার রাজনৈতিক ও সামরিক ঝুঁকি নিয়ে অন্যান্য গোপন অভিযানকে সমর্থন জুগিয়েছে।

ব্রিটিশ নৌবাহিনী কর্মকর্তা রবার্ট ম্যাগোয়ান ১৯৮৯ সালে রয়্যাল নেভির এলিট মেরিনস ইউনিটে যোগ দেন। দুই সপ্তাহ আগে তিনি রয়্যাল মেরিনসের কমান্ডিং জেনারেলের পদ থেকে বিদায় নেন। ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীর উপ-প্রধান জেনারেল গোয়েন জেনকিন্স তার স্থলাভিষিক্ত হন।