দোষীরা মুক্তই, বিলকিস বানুর রিভিউ পিটিশন খারিজ

গুজরাট গণহত্যার সময় নির্যাতিতা নারী বিলকিস বানুর রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ ও তার পরিবারের ১৪ সদস্যকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ আসামীর সাজা কমিয়ে আগাম মুক্তির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ওই পিটিশন রুজু করেছিলেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত ১১ অপরাধীকে ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে গোধরা সাবজেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়

মুক্তিপ্রাপ্ত ১১ ব্যক্তি বিলকিস বানুর প্রতিবেশী। ২০০২ সালের ৩ মার্চ তারা গুজরাটের আহমেদাবাদের কাছের একটি গ্রামে সংঘবদ্ধভাবে বিলকিস বানুকে ধর্ষণ করে। বিলকিস বানুর বয়স তখন ছিল ১৯ বছর। তিনি অন্তঃসত্তা ছিলেন। ধর্ষণের ফলে তার গর্ভের শিশুটি মারা যায়। নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে সেখানে সংঘটিত গণহত্যা ও সহিংসতার দিনগুলোয় এ ঘটনা ঘটে। অপরাধীরা বিলকিসের ৩-বছর বয়সী কন্যা সন্তানসহ পরিবারের মোট ১৪ সদস্যকে হত্যা করে। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে মুম্বাইয়ের একটি আদালত অপরাধীদের যাবজ্জীবন সাজা দেয়।

গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ ব্যক্তি গত ১৫ আগস্ট গুজরাটের গোধরা সাবজেল থেকে ছাড়া পান। গুজরাট সরকারের সাজা মওকুফ নীতির আওতায় আগাম মুক্তি চেয়ে আবেদন করেছিলেন দণ্ডপ্রাপ্ত এসব অপরাধী। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে গুজরাটের বিজেপি-দলীয় সরকার আবেদন মঞ্জুর করলে চলতি বছর ভারতের স্বাধীনতা দিবসে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। বিজেপির অভিভাবক সংগঠন আরএসএসের এক স্থানীয় নেতা জেল গেটে এসব অপরাধীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ভারতের অসংখ্য মানুষ।

এর আগে মে মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশে গুজরাট রাজ্য সরকারকে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের দণ্ড মওকুফের এখতিয়ার দেওয়া হয়। গুজরাটে অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম যথাযথ সরকার রয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আগস্টে ১১ ধর্ষক ও হত্যাকারীকে মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার।

গত মাসে বিলকিস বানু সুপ্রিম কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে একটি রিভিউ পিটিশন রুজু করেন। এতে বলা হয়, গুজরাটে দণ্ডপ্রাপ্তদের মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ‘যথাযথ সরকার’ রয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্ট যে মত দিয়েছেন, তা ভারতীয় দণ্ডবিধির পরিপন্থী।

পিটিশনে বলা হয়, দণ্ডবিধির ৪৩২ (৭) (খ) সাজা স্থগিত বা মওকুফের এখতিয়ার সম্পর্কে বলা হয়েছে। এতে উল্লেখ রয়েছে- যে রাজ্যে অপরাধীদের দণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেখানকার সরকারের বিবেচনার জন্যও সাজা মওকুফের বিষয়টি উপস্থাপন করতে হবে। যেহেতু ১১ ধর্ষক ও হত্যাকারীকে যাবজ্জীবন সাজার রায় মহারাষ্ট্রের একটি আদালত থেকে এসেছে, তাই সাজা মওকুফের আবেদনটি মহারাষ্ট্র সরকারের বিবেচনার জন্য পাঠানো উচিত ছিল।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অজয় রাস্তোগী ও বিচারপতি বিক্রম নাথকে গঠিত বেঞ্চ বিলকিস বানুর রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে আদালত বিলকিস বানু মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী রাধেশ্যাম ভগবানদাস শাহর সাজা মওকুফের আবেদন বিবেচনা করতে গুজরাট সরকারকে আদেশ দিয়েছে।