মেসির গায়ে আলখেল্লা: সমালোচনা ও পাল্টা যুক্তি

কাতার বিশ্বকাপের পুরস্কার মঞ্চে লিওনেল মেসির গায়ে আলখেল্লা পরিয়ে দেওয়ায় বহু কথা হচ্ছে। লিনেকার, জাবালেতার মতো সাবেক ফুটবলার থেকে শুরু করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে বিতর্ক জুড়েছে। জবাবে অনেকে বলছেন, বিজয়ীকে স্থানীয় কেতা অনুযায়ী সম্মানিত করার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ১৯৭০ বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে মেক্সিকান আয়োজকরাও পেলেকে সম্মান জানাতে তার মাথায় সমব্রেরো হ্যাট পরিয়ে দিয়েছিলেন।

মেসির গায়ে আলখেল্লা, সমালোচনা ও পাল্টা যুক্তি

১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে জুলে রিমে কাপটাই ঘরে নিয়ে যায় ব্রাজিল। সেবারে বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল মেক্সিকো। ফাইনাল শেষে পুরস্কার মঞ্চে পেলের মাথায় সমব্রেরো হ্যাট পরিয়ে দেন আয়োজকরা। রেওয়াজ অনুযায়ী মেক্সিকান সমাজে অভিজাতরাই সমব্রেরো হ্যাট পরে থাকেন। এজন্যই আয়োজকরা ফুটবলের জাদুকরকে সম্মান জানাতে প্রথাগত মস্তকাবরণ পরিয়েছিলেন।

১৯৭০-২০২২ অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময়। মেক্সিকো বিশ্বকাপের ফাইনালের স্টেডিয়ামে সমব্রেরো হ্যাট পরিহিত অবস্থায় সতীর্থদের কাঁধে চড়ে বসা পেলের সাদাকালো ছবিটি এতদিন পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে ফিরছে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের পর থেকে। সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর রাতে।

১৮ ডিসেম্বর কাতারের জাতীয় দিবস। এদিন বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষে চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক মেসিকে সম্মান জানাতে তার গায়ে প্রথাগত আলখেল্লা বা বিশত পরিয়ে দেন কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। কাতারের রীতি অনুযায়ী, যুদ্ধশেষে বিজয়ীর বেশে ফেরা বীরকে বিশত পরিয়ে দেওয়া হয়। এর বাইরে সচরাচর রাজপরিবারের সদস্য ও অভিজাতদের সম্মান জানাতে এ পোশাক পরানো হয়।

মেসির গায়ে আলখেল্লা, সমালোচনা ও পাল্টা যুক্তি

শেখ তামিম মেসির গায়ে বিশত পরানোর পর তার হাতে বিশ্বকাপ তুলে দেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। গ্যালারিভর্তি দর্শকের পাশাপাশি সারা বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলামোদি মানুষ টিভির সামনে বসে দৃশ্যটি দেখেছে এবং হর্ষোল্লাসে মেতেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দৃশ্যটির ভিডিও ছড়িয়েছে পৃথিবীর সর্বত্র। বিপত্তি বেধেছে এখানেই।

বিশ্বকাপ শেষের একদিন পরই সাবেক ইংলিশ তারকা গ্যারি লিনেকার, আর্জেন্টাইন তারকা পাবলো জাবালেতাসহ কয়েকজন মেসির গায়ে আলখেল্লা পরানোয় আর্জেন্টিনার জার্সি ঢাকা পড়েছে বলে আপত্তি তোলেন। তাদের সঙ্গে সুর মেলান আরও অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে বিতর্কে যোগ দেয় কিছূ সংবাদমাধ্যম।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ফিফার নিয়ম অনুযায়ী প্রতিযোগিতার ফাইনালে আনুষ্ঠানিকতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফুটবলাররা আলাদা কোনো পোশাক পরতে পারেন না। এ হিসেবে ম্যাচের জার্সি ছাড়া অন্য কিছু পরে ট্রফি নেওয়া সম্ভব নয়। তবে ফিফা সভাপতি যখন মেসির হাতে কাপ তুলে দেন তখন মেসির গায়ে ছিল শেখ তামিমের পরিয়ে দেওয়া বিশত।

এদিকে মেসির গায়ে আলখেল্লা পরিয়ে দেওয়া নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সমালোচনার জবাব দিয়েছেন পেলেকে সমব্রেরো হ্যাট পরানোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে। এনবিসির সাংবাদিক মেহদী হাসান পেলের মাথায় সমব্রেরো হ্যাটের কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন তুলেছেন, মেসির গায়ে প্রথাগত আরব পোশাকের কথা উল্লেখ করে যে বর্ণবাদী, আরব-বিদ্বেষী ঘৃণা উদগীরণ হচ্ছে তা বন্ধ হবে কি?

ক্রীড়া সাংবাদিক নিকি কসবি টুইটে লিখেছেন, শেখ তামিম যখন মেসির কাঁধে বিশত পরিয়ে দিচ্ছিলেন স্টেডিয়ামে সবচেয়ে জোরালো হর্ষোল্লাস শোনা গেছে তখনই। আরব দুনিয়ায় কাউকে সর্বোচ্চ সম্মান জানানোর এটাই নিয়ম। মেসি বিষয়টি জানতেন। স্টেডিয়াম ভর্তি মানুষও তা জানতেন। এটাই শেষ কথা।